বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লেখমালা।

ন্যায়ের] আক্রমণ পরাভূত করিয়া, [রাজ্য মধ্যে] চিরশান্তি[] সংস্থাপিত করিয়াছিলেন, সেই শ্রীমান্ গোপালদেব নামক অপর [রাজাধিরাজ] লোকনাথেরও জয় হউক।

(২)

 এই গোপালদেব হইতে শ্রীধর্ম্মপাল নরপতি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহার মহিমা [দুগ্ধাম্ভোধি-বিলাস] ক্ষীরোদসমুদ্র-সৌন্দর্য্যকে উপহাস করিত। লক্ষ্মীর উদ্ভবস্থান বলিয়া ক্ষীরোদসমুদ্র “লক্ষ্মীজন্ম-নিকেতন”, তিনিও রাজকুলে সমুদ্ভূত বলিয়া “লক্ষ্মী-জন্মনিকেতন;”—ক্ষীরোদসমু্দ্র মকরপূর্ণ বলিয়া “স-মকর”; তিনিও সমভাবে রাজকর গ্রহণ করিতেন বলিয়া “সম-কর”;—ক্ষীরোদসমুদ্র বিষ্ণুকে বহন করিতে সমর্থ বলিয়া “ক্ষ্মাভর-বহন-ক্ষম”, তিনিও ধরাভারবহনে সমর্থ বলিয়া “ক্ষ্মা-ভরবহনক্ষম”;—পক্ষচ্ছেদভয়ে শরণাগত [ভূভৃৎ] ধরাধারক পর্ব্বতসমূহের পক্ষে ক্ষীরোদসমুদ্র একমাত্র আশ্রয়, স্বপক্ষচ্ছেদভয়ে শরণাগত [ভূভৃৎ] নরপালগণের পক্ষে তিনিও একমাত্র আশ্রয়;—ক্ষীরোদসমুদ্র জলস্থলের [মর্য্যাদা] সীমা সংরক্ষণে নিরত, তিনিও লোকসমাজের [মর্য্যাদা] শাস্ত্রনির্দ্দিষ্ট-স্বধর্ম্ম-সংরক্ষণে একনিষ্ঠ;—[সন্ধ্যাসমাগমে সূর্য্যতেজঃ সমুদ্রগর্ভে অস্তমিত হয় বলিয়া] ক্ষীরোদসমুদ্র [শৌর্য্যালয়] সূর্য্যকিরণের আধার, তিনিও বীরত্বের আধার [শৌর্য্যালয়]।[]

  1. “शाश्वतीं प्राप शान्तिं” এই উক্তির [প্রাপ] ক্রিয়াপদ [লোকনাথ-পক্ষে] প্রচলিত অর্থে, এবং [গোপালদেব-পক্ষে] অন্তর্ভূত-নিজন্ত-বিজ্ঞাপক [প্রাপয়ামাস] অর্থে গৃহীত হইলে, শ্লিষ্ট-প্রয়োগ সর্ব্বাংশেই সার্থক হইতে পারে।

    “सर्व्वेषामेव धातूनां ण्यर्थान्तर्भाव इष्यते।
    अनुरोधात प्रयोगाणां, स्वेच्छया न कदाचन।”

     প্রয়োগানুরোধে ধাতুর অন্তর্ভূত-নিজন্ত-বিজ্ঞাপক অর্থ গ্রহণ করিবার রীতি ছিল। ধর্ম্ম সূরির এই কারিকা উদ্ধৃত করিয়া, শ্রীসৃষ্টিধরাচার্য্য “ভাষাবৃত্তির” টীকায় তাহার পরিচয় প্রদান করিয়া গিয়াছেন।

  2. এই শ্লোকে প্রত্যক্ষর-শ্লেষের পরিচয় বিজ্ঞাপক রচনা-কৌশল দেদীপ্যমান। কিন্তু ডাক্তার হুল্‌জ্ সমস্ত শ্লিষ্টপদের ব্যাখা লিপিবদ্ধ করিবার চেষ্টা করেন নাই;—সাহিত্য পরিষৎ-পত্রিকায় প্রকাশিত বঙ্গানুবাদেও তাহা উল্লিখিত হইতে পারে নাই। “ক্ষ্মাভর”-শব্দ [সমুদ্র পক্ষে] বিষ্ণুকেই ধ্বনিত করিতেছে। ডাক্তার হুল্‌জের নিকট তাহা প্রতিভাত হয় নাই বলিয়া, তিনি [সমুদ্র পক্ষের] অর্থ প্রকটিত করিবার সময়েও, সমুদ্রকেই [ক্ষ্মাভর] ধরা-ভারবহন-ক্ষম বলিতে গিয়া লিখিয়া গিয়াছেন,—“Whose Majesty possessed the coquettish smile (i. e., the brilliant whiteness) of the milk-ocean,—which (milk-ocean) was the birth-place of Lakshmi; which contained sea-monsters (Samakarah); which was able to bear the burden of the earth.” বলা বাহুল্য, ধরাভার-বহন-ক্ষম বলিয়া ক্ষীরোদসমুদ্রের প্রসিদ্ধি নাই; যিনি ধরা-ভরণ-ক্ষম অথবা [বরাহাবতারে] ধরাভারবহনক্ষম, সেই [ক্ষ্মা-ভর] বিষ্ণুকে বহন করিতে সমর্থ বলিয়াই, ক্ষীরোদ সমুদ্র সুপরিচিত। এখানে সেই অর্থই সূচিত হইয়াছে। “শৌর্য্যালয়”-শব্দও দুইপক্ষে দুইটি বিভিন্ন অর্থেই প্রযুক্ত হইয়াছে। ডাক্তার হল্‌জ্ তৎপ্রতি লক্ষ্য করেন নাই; সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকায় প্রকাশিত বঙ্গানুবাদেও তাহা উল্লিখিত হয় নাই। এই শ্লোকে কবিকল্পনার আতিশয্য দেদীপ্যমান থাকিলেও, ইহাতে কতকগুলি ঐতিহাসিক তথ্য পরিস্ফুট হইয়া রহিয়াছে। (১) গোপালদেব রাজপুত্র ছিলেন না; পালনরপালগণের মধ্যে ধর্ম্মপালই প্রথম রাজবংশজাত রাজা; (২) তিনি সমভাবে [পক্ষপাতশূন্য-বিচারে যথাযোগ্য] কর গ্রহণ করিতেন; (৩) তাঁহার সময়ে ধরাভার বহন

৬৪