বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারায়ণপালদেবের তাম্রশাসন।

(৭)

 তাঁহার[] অজাতশত্রুর[] ন্যায় শ্রীমান্ বিগ্রহপাল নামক পুত্র জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহার [বিমল জলধারার ন্যায়] বিমল অসিধারায় শত্রু-বনিতা বর্গের [সধবা-জনোচিত] অঙ্গরাগ বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছিল।

(৮)

 তিনি শত্রুবর্গকে গুরুতর বিপদ্-ভোগের পাত্র এবং সুহৃদ্বর্গকে যাবজ্জীবন[] সম্পৎ-সম্ভোগের পাত্র করিয়াছিলেন।

(৯)

 সমুদ্রপত্নী [জহ্নুকন্যা] জাহ্নবীর ন্যায় হৈহয় [রাজ]-বংশ-ভূষণরূপা[] লজ্জা নাম্নী [কন্যা] তাঁহার পত্নী হইয়াছিলেন। [সেই লজ্জাদেবীর] বিশুদ্ধ চরিত্র তদীয় পিতৃবংশে এবং পতি-বংশে পরম “পাবন-বিধি” বলিয়া পরিগণিত হইয়াছিল।

  1. এই শ্লোকের “তৎসূনুঃ” কাহার পুত্রকে সূচিত করিতেছে, তৎসম্বন্ধে এসিয়াটিক্ সোসাইটির “সেণ্টিনারী রিভিউ”-পুস্তকের ইতিহাসাংশের পরিশিষ্টে ডাক্তার হরণ্‌লি [আমগাছি লিপির সমালোচনা-প্রসঙ্গে] লিখিয়া গিয়াছেন,—“It seems clear from this grant that Vigrahapála was not a nephew, but a son of Devapála; for the pronoun “his son” (tat-súnuh) must refer to the nearest preceding noun, which is Devapála. In the Bhágalpur-grant this reference is obscured through the interpolation of an intermediate verse in praise of Jayapála, which makes it appear as if Vigrahapála were a son of Jayapála.”—Centenary Review Appendix II. P. 206. রচনা-রীতির প্রতি লক্ষ্য করিলে, প্রথম বিগ্রহপালদেবকে দেবপালদেবের পুত্র বলিয়াই স্বীকার করিতে হয়। দেবপালদেবও অপুত্রক ছিলেন না। তাঁহার [মুঙ্গেরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [৫১-৫২ পংক্তিতে] রাজ্যপাল নামক তদীয পুত্র যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত থাকিবার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। তিনি যে পিতার জীবিতকালেই পরলোক গমন করিয়াছিলেন, তাহার প্রমাণাভাব। গরুড়স্তম্ভ-লিপিতে [১৬ শ্লোকে] দেবপালের পরবর্ত্তী নরপাল শূরপাল নামে উল্লিখিত। সকলেই তাঁহাকে প্রথম বিগ্রহপাল বলিয়াই গ্রহণ করিয়াছেন। প্রথম বিগ্রহপালের একাধিক নামের এইরুপ পরিচয় প্রাপ্ত হইয়া, যুবরাজ রাজ্যপালকে, শূরপালকে এবং প্রথম বিগ্রহপালকে, অভিন্ন ব্যক্তি বলিয়াই গ্রহণ করিতে ইচ্ছা হয়। এই সিদ্ধান্ত সমীচীন বলিয়া গৃহীত হইলে, পালবংশীয় নরপালগণের প্রচলিত বংশাবলীর ভ্রমসংশোধন করিতে হইবে।
  2. যুধিষ্ঠির “অজাত-শত্রু” নামে সুপরিচিত। এখানে মগধাধিপতি বিম্বিসারের পুত্র অজাতশত্রুই সূচিত হইয়াছেন মনে করিয়া, ডাক্তার হুল্‌জ্ লিখিয়া গিয়াছেন;—“Vigrahapála himself became Ajátaçatru, i.e. ‘one whose enemies have ceased to exist.’ On this verbal play alone rests the comparison with King Ajátaçatru.” এই ব্যাখ্যা সমীচীন বলিয়া বোধ হয না।
  3. “पुरुषायुष-दीर्घानां सम्पदां” পুরুষের আয়ুষ্কাল-স্থায়ী সম্পদের পরিচয় দান করে। “পুরুষের আয়ুঃ [शतायु र्वै पुरुषः] শতবর্ষ বলিয়া সুপরিচিত,—তাহা এখানে “যাবজ্জীবন”-অর্থ জ্ঞাপন করিতেছে।
  4. পালবংশীয় নরপালগণের “জাতি” কি ছিল, তাঁহাদের শাসন-লিপিতে তাহার কিছুমাত্র উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায় না। তাঁহারা কিরূপ বংশে বিবাহ করিয়াছিলেন, তাহারই কিছু কিছু পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।

৬৭