এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গরুড়স্তম্ভ-লিপি।
বঙ্গানুবাদ।
(১)
শাণ্ডিল্যবংশে[১] [বিষ্ণুঃ?],[২] তদীয় অন্বয়ে বীরদেব, তদ্গোত্রে পাঞ্চাল, এবং পাঞ্চাল হইতে [তৎপুত্র] গর্গ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন।
(২)
সেই গর্গ এই বলিয়া বৃহস্পতিকে উপহাস করিতেন যে,—[শক্র] ইন্দ্রদেব কেবল পূর্ব্বদিকেরই অধিপতি, দিগন্তরের অধিপতি ছিলেন না; [কিন্তু বৃহস্পতির ন্যায় মন্ত্রী থাকিতেও] তিনি সেই একটিমাত্র দিকেও [সদ্যঃ][৩] দৈত্যপতিগণ কর্ত্তৃক পরাজিত হইয়াছিলেন; [আর] আমি সেই পূর্ব্বদিকের[৪] অধিপতি ধর্ম্ম[৫] [নামক] নরপালকে অখিল দিকের স্বামী করিয়া দিয়াছি।
(৩)
নিসর্গ-নির্ম্মল-স্নিগ্ধা চন্দ্রপত্নী কান্তিদেবীর[৬] ন্যায়, অন্তর্ব্বিবর্ত্তিনী ইচ্ছার অনুরূপা, তাঁহার ইচ্ছানাম্নী পত্নী ছিলেন।
- ↑ এই বংশোদ্ভব গুরব মিশ্র [অষ্টাদশ শ্লোকে] “জমদগ্নিকুলোৎপন্ন” বলিয়া উল্লিখিত থাকায়, এই বংশ রাঢ়ী বারেন্দ্র-ব্রাহ্মণ-সমাজের সুপরিচিত শাণ্ডিল্য-বংশ হইতে পৃথক্ বলিয়াই বোধ হয়।
- ↑ এই শ্লোকের প্রথম দুইটি অক্ষরে একটি বিসর্গান্ত শব্দে যে বীজি-পুরুষের নাম উৎকীর্ণ হইয়াছিল, তাহার বিসৰ্গ-চিহ্ন মাত্রই বর্ত্তমান আছে। অধ্যাপক কিল্হর্ণ তাহাকে “বিষ্ণু” বলিয়া অনুমান করিয়া লইয়াছেন, কিন্তু এরূপ অনুমানের কারণ কি, তাহা প্রতিভাত হয় না।
- ↑ দ্বিতীয় চরণের শেষেও দুইটি অক্ষরে একটি বিসর্গান্ত শব্দ উৎকীর্ণ ছিল; তাহারও বিসর্গ-চিহ্ন মাত্রই অবশিষ্ট আছে। অধ্যাপক কিল্হর্ণ তৎসম্বন্ধে কোন রূপ অনুমানের অবতারণা করেন নাই। অন্বয়, অর্থ এবং ছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করিয়া, এই বিলুপ্ত শব্দটিকে [সদ্যঃ] বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে।
- ↑ অধ্যাপক কিল্হর্ণ ধৃত [“धर्म्मः कृतस्तदधिपः” স্থলে] “धर्म्मः कृतस्तधिपः”-পাঠ লিপিকর-প্রমাদের নিদর্শন বলিয়াই বোধ হয়। পালবংশীয় নরপালগণ প্রথমে বঙ্গদেশে অধিকার লাভ করিয়া, পরে মগধ জয় করিবার যে কিংবদন্তী তারানাথের গ্রন্থে উল্লিখিত আছে, “तदधिप” শব্দে তাহা সমর্থিত হইতেছে। পাল-নরপালগণ যে বাঙ্গালী ছিলেন, এই বিশেষণ হইতে তাহার আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায়।
- ↑ এই শ্লোকোক্ত ধর্ম্ম নামক রাজা ইতিহাস-বিখ্যাত ধর্ম্মপাল। তাঁহার [খালিমপুবে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসন তদীয় বিজয়-রাজ্যের [দ্বাত্রিংশবর্ষীয় দ্বাদশ মার্গ দিনে] পাটলিপুত্রের জয়স্কন্ধাবার হইতে প্রদত্ত হইয়াছিল। তাঁহার বিজয়-রাজ্যের ষড়্-বিংশতিবর্ষে বুদ্ধগয়াধামে তাঁহার নামাঙ্কিত একটি প্রস্তর-লিপি [কেশব-প্রশস্তি] উৎকীর্ণ হইবার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। ইহার পূর্ব্বে আর কখনও পালবংশীয় নরপালগণের শাসন-ক্ষমতা মগধে প্রতিষ্ঠিত থাকিবার প্রমাণ এ পর্য্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নাই। ধর্ম্মপালের পিতা গোপালদেবকে প্রকৃতিপুঞ্জ “মাৎস্য-ন্যায়” দূরীভূত করিবার উদ্দেশ্যে, সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করিবার কথা ধর্ম্মপালের [খালিমপুরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [৩য় শ্লোকে] উল্লিখিত আছে। তারানাথের গ্রন্থেও তাহার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। গরুড়স্তম্ভ-লিপির এই শ্লোকের বর্ণনায়, ধর্ম্মপালের সময়েই [তাঁহার মন্ত্রিবর গর্গের মন্ত্রণা-বলে] মগধাদি অন্যান্য প্রদেশে পাল-সাম্রাজ্য বিস্তৃত হইবার আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায়।
- ↑ অধ্যাপক কিল্হর্ণ “কান্তি”-শব্দে চন্দ্রের “শোভাকেই” গ্রহণ করিয়াছেন; কিন্তু দাম্পত্য-সম্পর্ক বর্ণনা করিবার সময়ে, সেরূপ সাধারণ অর্থে “কান্তি”-শব্দ প্রযুক্ত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না। ধর্ম্মপালের [খালিম-
৭৭