বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লেখমালা।

(৪)

 বেদচতুষ্টয়রূপ-মুখপদ্ম-লক্ষণাক্রান্ত, স্বাভাবিক উৎকৃষ্ট পদগৌরবে ত্রিলোকশ্রেষ্ঠ, কমল-যোনি ব্রহ্মার ন্যায়, তাঁহাদের দ্বিজোত্তম[] পুত্র,[] নিজের “শ্রীদর্ভপাণি” এই নাম ধারণ করিয়াছিলেন।

(৫)

 সেই দর্ভপাণির নীতি-কৌশলে[] শ্রীদেবপাল [নামক] নৃপতি মতঙ্গজ-মদাভিষিক্ত-শিলা-সংহতিপূর্ণ রেবা (নর্ম্মদা] নদীর জনক [উৎপত্তিস্থান বিন্ধ্যপর্ব্বত] হইতে [আরম্ভ করিয়া] মহেশ-ললাট-শোভি-ইন্দু-কিরণ-শ্বেতায়মান গৌরীজনক [হিমালয়] পর্ব্বত পর্য্যন্ত, সূর্য্যোদয়াস্তকালে অরুণরাগ-রঞ্জিত [উভয়] জল-রাশির আধার পূর্ব্ব-সমুদ্র এবং পশ্চিম-সমুদ্র [মধ্যবর্ত্তী] সমগ্র ভূভাগ কর-প্রদ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।

(৬)

 নানা-মদমত্ত-মতঙ্গজ-মদবারি-নিষিক্ত ধরণিতল[]-বিসর্পি-ধূলিপটলে দিগন্তরাল সমাচ্ছন্ন করিয়া, দিক্‌চক্রাগত-ভূপালবৃন্দের চিরসঞ্চরমান সেনাসমূহ যাঁহাকে নিরন্তর দুর্ব্বিলোক করিয়া রাখিত, সেই দেবপাল [নামক] নরপাল [উপদেশ গ্রহণের জন্য] দর্ভপাণির অবসরের অপেক্ষায়, তাঁহার দ্বারদেশে দণ্ডায়মান থাকিতেন।

    পুরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [পঞ্চম শ্লোকে] তাঁহার মাতা “शीतांशोरिव रोहिणी” বলিয়া বর্ণিতা। এখানেও, শব্দান্তরের সাহায্যে, সেইরূপ উপমাই সূচিত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয়। পুরীধামের লোকনাথ-মন্দিরের প্রাঙ্গনে চন্দ্র-মূর্ত্তির দক্ষিণে, চন্দ্র-পত্নী কান্তি-দেবীর মূর্ত্তি অদ্যাপি দেখিতে পাওয়া যায়। শাস্ত্রেও তাহার নির্দ্দেশ আছে। যথা—

    “चन्द्रः श्वेतवपुः कार्य्यः श्वेताम्बरधरः प्रभुः।
    चतुर्व्वाहु र्म्महातेजाः सर्व्वाभरण-भूषितः॥
    कुमुदौ च सितौ कार्य्यौ तस्य देवस्य हस्तयोः।
    कान्ति र्म्मूर्त्तिमती कार्य्या तस्य पार्श्वे तु दक्षिणो॥”

  1. অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ এই শ্লোকের “দ্বিজেশ”-শব্দের চন্দ্র-বাচক অর্থ গ্রহণ করিয়া, [Epigraphia Indica Vol. II, p. 3.] লিখিয়া গিয়াছেন “and the epithet dvijesha, applied to him, besides suggests, that he was like the Moon” কিন্তু যে কবি [পূর্ব্ব-শ্লোকেই] দর্ভপাণির মাতাকে চন্দ্র-পত্নীর সহিত তুলনা করিয়া গিয়াছেন, সেই কবি, তাহা বিস্মৃত হইয়া, [পর শ্লোকে] দর্ভপাণির জন্য চন্দ্র-বাচক “দ্বিজেশ”-বিশেষণের চিন্তা করিতেই পারিতেন না। এখানে “দ্বিজ-শ্রেষ্ঠ” বুঝাইবার জন্যই দ্বিজেশ-শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে।
  2. [सूनुः] কর্ত্তৃপদের [आसीत्] ক্রিয়া পদ উহ্য থাকায়, “दधान”-শব্দই ক্রিয়া-পদের আকাঙ্খা নিবৃত্ত করিতেছে। এরূপ প্রয়োগ সংস্কৃত-সাহিত্যে অনেক দেখিতে পাওয়া যায়।
  3. নারায়ণপালদেবের [ভাগলপুরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [৫-৬ শ্লোকে] দেবপালের ভ্রাতা জয়পাল নামক বিজয়ী বীর পুরুষের বাহুবলই সাম্ৰাজ্য-বিস্তারের একমাত্র সহায় বলিয়া উল্লিখিত আছে। তাহার সহিত যে নীতি-কৌশলেরও সম্বন্ধ বর্ত্তমান ছিল, এই শ্লোকে তাহার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।
  4. ধরণি-বিজ্ঞাপক “ক্ষোণী”-শব্দ বৈদিক-সাহিত্যে [ঋগ্বেদ ১।৫।৪।১] দেখিতে পাওয়া যায়। লৌকিক সাহিত্যে “ক্ষৌণী” এবং “ক্ষোণী”-শব্দের ব্যবহার দেখিতে পাওয়া যায়। অমর কোষের [২।১।২]

৭৮