পাতা:গ্রহ-নক্ষত্র.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯২
গ্রহ-নক্ষত্র

থাকিয়া বন্ বন্ করিয়া ঘুরিত। কেবল ঘুরা নয়, ঐ সব জিনিস গরম বাষ্পের আকারে থাকিয়া হয় ত একটা ছোট সূর্য্যের মত জ্বলিত। কিন্তু পৃথিবী ত আর সূর্য্যের মত বড় নয়, কাজেই কিছু দিনের মধ্যে সে তাপ ছাড়িয়া নিভিয়া গিয়াছিল ও তাহার শরীরের বাষ্প জমাট বাঁধিবার চেষ্টা করিতেছিল, কিন্তু তখনো তাহাতে ভয়ানক তাপ ছিল এবং সে আগেকারই মত বন্ বন্ করিয়া ঘুরিতেছিল। পৃথিবীর দেহ যখন এই রকম কোমল এবং গরম, তখনি পৃথিবীর দেহ হইতে খানিকটা অংশ খসিয়া গিয়া চাঁদের জন্ম হইয়াছিল। তাহা হইলে দেখ, পৃথিবী নিজের দেহ দিয়াই চাঁদকে গড়িয়াছিল। কাজেই চাঁদকে যদি পৃথিবীর পুত্র বলা যায় তাহা হইলে অন্যায় হয় না।

 যাহা হউক চাঁদের মৃত্যু কেমন করিয়া হইল এখন বলি শুন। চাঁদ যখন পৃথিবী হইতে পৃথক হইয়া পড়িয়াছিল, তখন দুইয়েরই তাপ সমান ছিল, এবং দুজনে দেহের তাপ ছাড়িয়া ঠাণ্ডা হইতে আরম্ভ করিয়াছিল। এই অবস্থায় কে শীঘ্র শীঘ্র ঠাণ্ডা হইবে বলিতে পার কি? চাঁদ আকারে ছোট, কাজেই সে শীঘ্র ঠাণ্ডা হইয়া পড়িতে লাগিল। এক হাঁড়ি ভাত যখন উনুন হইতে নামানো হয়, তখন তাহার সব অংশই প্রায় সমান গরম থাকে। কিন্তু যদি এক হাতা ভাত হাঁড়ি হইতে লইয়া একখানা থালায় রাখিয়া দাও, তাহা হইলে হাঁড়ির ভাতের অনেক আগে থালার এক হাতা ভাত ঠাণ্ডা হইয়া পড়ে। এই রকমেই পৃথিবীর চেয়ে ছোট চাঁদটিই শীঘ্র ঠাণ্ডা হইয়াছিল, এবং তাহার সেই বাষ্পীয় দেহ শীঘ্র শীঘ্র তরল হইয়া শেষে জমাট বাঁধিয়া শক্ত হইয়াছিল। কিন্তু তখনো তাহার ভিতরটা গরম ছিল এবং গলা অবস্থায় ছিল;—তাই চাঁদের উপরকার কঠিন আবরণ ভেদ করিয়া ভিতরকার গলা মাটি-পাথর হাজার হাজার আগ্নেয় পর্ব্বতের আকারে উপরে উঠিত। ইহার পরে চাঁদের ভিতর পর্য্যন্ত ঠাণ্ডা হইলে আগ্নেয় পর্ব্বত নিভিয়া গিয়াছিল