পাতা:গ্রহ-নক্ষত্র.pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বৃহস্পতির চাঁদ
১৩৯

পাইয়াছিলেন। কিন্তু প্রথমে ইহা তাঁহার অদৃষ্টে ঘটে নাই। বরং তাঁহাকে নানা রকম অপমান সহ্য করিতে হইয়াছিল। দেশের বড় বড় পণ্ডিতদিগকে ডাকিয়া যখন গ্যালিলিয়ো বলিলেন যে, বৃহস্পতি শুক্র মঙ্গল প্রভৃতি গ্রহেরা পৃথিবীর মত বড় বড় জিনিস এবং চাঁদ সঙ্গে করিয়া তাহারা সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করে,—তখন তাঁহারা গ্যালিলিয়োর কথায় কানই দিলেন না। চারটি চাঁদ বৃহস্পতির চারিদিকে ঘুরিতেছে, তাহা দূরবীণ দিয়া দেখাইলেও তাঁহাদের বিশ্বাস হইল না। তাঁহারা বলিতে লাগিলেন,—গ্যালিলিয়ো যাদু-মন্ত্র জানেন, তাই তিনি মন্ত্রের জোরে ভেল্‌কি দেখাইতেছেন।

 সেসময়ে যাদু-মন্ত্র দিয়া প্রতারণা করা একটা বড় অপরাধ বলিয়া লোকে বিশ্বাস করিত। জজ্ সাহেব গ্যালিলিয়োর অপরাধের কথা শুনিয়া তাঁহাকে ধরিয়া বিচার শুরু করিয়া দিলেন। বিচারে প্রমাণ হইল, গ্যালিলিয়ো সত্যই তাঁর দূরবীণে কোনো রকম মন্ত্র পড়িয়া বৃহস্পতির চারটি চাঁদ দেখাইয়াছেন! চোর ডাকাতের মত গ্যালিলিয়োকে জেলে যাইতে হইল!

 দেখ, গ্যালিলিয়োর কি দূরদৃষ্ট! জেলে যাইবার সময়েও তিনি বলিতে লাগিলেন,—দূরবীণে যাহা দেখা গিয়াছে সত্য। সূর্য্য আকাশে স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া আছে এবং গ্রহেরা তাহারি চারিদিকে ঘুরিতেছে!

 সত্য কথা বেশি দিন ঢাকা থাকে না। জেল হইতে গ্যালিলিয়ো খালাস পাইলে লোকে বুঝিতে আরম্ভ করিয়াছিল, তিনি ঠিক্ কথাই বলিয়াছেন। ইহার পর হইতে পৃথিবীর লোকে গ্যালিলিয়োকে খুব সম্মান দেখাইয়াছিল।

 বৃহস্পতির যে চারিটি চাঁদকে লইয়া তিন শত বৎসর পূর্ব্বে এত কাণ্ড হইয়াছিল, তোমরা ছোট দূরবীণ হাতে পাইলেও একবার তাহাদিগকে দেখিয়ো। তোমরাও গ্যালিলিয়োর মত আনন্দ পাইবে।