পাতা:গ্রহ-নক্ষত্র.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
হ্যালির ধূমকেতু
১৭৭

সে সময়ে জ্যোতিষীদের মনে কত উদ্বেগ, কত উৎসাহ। তাঁহারা দূরবীণ খাটাইয়া কাগজ পেন্‌সিল্ লইয়া হিসাব করিতেই রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া কাটাইতে লাগিলেন। এই সময়ে ফরাসীদের মধ্যে একজন বড় জ্যোতিষী ছিলেন। ইঁহার নাম ক্লারট্ (Clairut); ইনি হিসাব করিয়া বলিলেন, হ্যালির ধূমকেতুর সঙ্গে পথের মাঝে বৃহস্পতির দেখাশুনা হইবে। বৃহস্পতির টানে হয় ত ধূমকেতু কিছুকাল পরে দেখা দিবে।

 যাহা হউক ১৭৫৭ সালের শীতকাল উপস্থিত হইল। নানা দেশের জ্যোতিষীরা দূরবীণ দিয়া ধূমকেতুর খোঁজ আরম্ভ করিলেন। দুই তিন মাস খোঁজ করার পরও কিন্তু ইহার সন্ধান পাওয়া গেল না। জোতিষীরা ভাবিতে লাগিলেন, তাহা হইলে কি হ্যালির কথা মিথ্যা। তবুও তাঁহারা খোঁজ করা ছাড়িলেন না। কিন্তু আর বেশি দিন প্রতীক্ষা করিতে হইল না, সেই বৎসরের ২৩শে ডিসেম্বর তারিখে ধূমকেতুর ছোট দেহ দূরবীণে ধরা পড়িল এবং কয়েকদিনের মধ্যে প্রকাণ্ড লেজ বাহির করিয়া সকলকে অবাক্ করিয়া দিল। এই রকমে হ্যালি সাহেবের ভবিষ্যদ্বাণী কথায় কথায় সত্য হইয়া গেল!

 ভাবিয়া দেখ, জ্যোতিষীদের সেদিন কি আনন্দ। হ্যালি সাহেব যদি সেদিন বাঁচিয়া থাকিতেন, তাঁহার কি আনন্দ হইত তাহাও একবার ভাবিয়া দেখ। যাহা হউক, ঐ দিন হইতেই জ্যোতিষীরা বুঝিয়াছিলেন, সকল ধূমকেতু একবার দেখা দিয়া পলাইয়া যায় না। নির্দ্দিষ্ট সময়ে নির্দ্দিষ্ট পথে গ্রহদের মত সূর্য্য-প্রদক্ষিণ করে, এমন ধূমকেতুও অনেক আছে।

 ১৭৫৮ সালের পরে ছিয়াত্তর বংসর কাটিয়া গেলে হ্যালির ধূমকেতু ১৮৩৫ সালে একবার দেখা দিয়াছিল। তার পরে ১৯১০ সালে সেই ধূমকেতুই আবার আমাদিগকে দেখা দিয়া গিয়াছে। সুতরাং এই হিসাবে ইংরাজি ১৯৮৫ সালে সে পুনরায় দেখা দিবে। তখন আমরা বাঁচিয়া থাকিব না, কিন্তু তোমরা উহাকে দেখিতে পাইবে।