পাতা:গ্রহ-নক্ষত্র.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সূর্য্য
২৫

বিদ্যুতের ল্যাম্পের ভিতরে যে একটা খুব সরু তার থাকে, তাহার ভিতর দিয়া বিদ্যুৎ গেলেই সেটা গরম হয় এবং সেই গরমে তাহা লাল হইয়া বা সাদা হইয়া জ্বলিতে থাকে। ইহাতেই আমরা বিদ্যুতের ল্যাম্প্ হইতে আলো পাই এবং তাহার কাছে হাত রাখিলে তাপ পাই।

 ইহাই যদি ঠিক হয়, তাহা হইলে সূর্য্যে কি জ্বলিতেছে বলিতে পার কি?—জ্যোতির্ব্বিৎ পণ্ডিতেরা ইহার উত্তর দিয়াছেন। তাঁহারা স্থির করিয়াছেন যে, আমাদের পৃথিবীর উপরে যেমন মাটি পাথর বালু কাঁকর আছে, সূর্য্যে তাহার কিছুই নাই। তাহাতে আছে কেবল বাষ্প; এই বাষ্পই জ্বলিয়া এত তাপ ও আলোক দেয়। সমস্ত সূর্য্যটা এই রকম বাষ্প দিয়া প্রস্তুত বলিয়া, সূর্য্য পৃথিবীর চেয়ে যত গুণ বড়, উহার ওজন তত গুণ অধিক নয়। সূর্য্য যে বাষ্প দিয়া প্রস্তুত, তাহা আনিয়া যদি একটা হাঁড়ির মধ্যে রাথিয়া ওজন কর এবং তার পরে সেই হাঁড়ি খালি করিয়া তাহাতে আমাদের পৃথিবীর মাটি লইয়া ওজন কর, তাহা হইলে দেখিবে পৃথিবীর মাটির ওজন সূর্য্যের বাষ্পের ওজনের প্রায় চারিগুণ বেশি হইয়াছে। সূর্য্য দূরে থাকিয়া এত জাঁক-জমক দেখাইলেও, তাহার দেহটা খুব হাল্‌কা!

 সূর্য্যের দেহ জ্বলন্ত বাষ্প দিয়া গড়া, কিন্তু তাই বলিয়া যেন মনে করিও না, আমাদের আকাশের বাতাস যেমন বাষ্প, সেই-রকম বাষ্প দিয়া সূর্য্যের শরীরখানি গড়া হইয়াছে। বাষ্পকে ছোট পাত্রে আট্‌কাইয়া চাপ দিলে তাহা আকারে ছোট হইয়া যেমন খুব ঘন হয়, সূর্য্যের গোলাকার যে অংশটাকে আমরা চোখে দেখিতে পাই, তাহা ঐ-রকম ঘন বাষ্প দিয়াই প্রস্তুত। মাটি পাথর বালু কাঁকর জমাট বাঁধিয়া পৃথিবীকে যেমন একটা গোলাকার বস্তু করিয়া তুলিয়াছে, খুব ঘন জ্বলন্ত বাষ্প একত্র হইয়া সেই রকমে সূর্য্যকে একটা ভয়ানক বড় গোলাকার বস্তুর মত করিয়া গড়িয়াছে।