পাতা:গ্রহ-নক্ষত্র.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৬
গ্রহ-নক্ষত্র

 কেবল মাটি পাথর বালু ও কাঁকর লইয়াই পৃথিবী নয়, পৃথিবীর ঠিক উপরে প্রায় পঁচিশ ক্রোশ পর্য্যন্ত বাতাস আছে। ইহাকেও পৃথিবীর অংশ বলিয়া ধরা উচিত, কারণ পৃথিবীর গায়ে লাগিয়া থাকিয়া ইহা পৃথিবীর সঙ্গে সঙ্গেই ঘোরা-ফেরা করে। পৃথিবী বায়ুরাশিকে এমন জোরে নিজের চারিদিকে টানিয়া রাখে যে, কোনোক্রমে একটুও বাতাস পৃথিবী ছাড়িয়া পলাইতে পারে না। কাজেই আমাদের আকাশের বাতাসকে কখনই পৃথিবী-ছাড়া জিনিস বলা যায় না।

 আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কি-রকম, তাহা তোমাদের জানা আছে। বাতাস জিনিসটা একেবারে স্বচ্ছ; কাঠ পাথর ইট্ প্রভৃতি জিনিস যেমন আমাদের দৃষ্টি আটকাইয়া দেয়, বাতাস সে রকমে দৃষ্টি আটকায় না। কাঠের ভিতর দিয়া বা ইটের দেওয়ালের ভিতর দিয়া আমরা কোনো জিনিস দেখিতে পাই না, কিন্তু বায়ুর ভিতর দিয়া সব জিনিসই দেখিতে পাই। এই জন্যই চন্দ্রসূর্য্যের আলো ও নক্ষত্রদের আলো পঁচিশ ক্রোশ গভীর বায়ুর আবরণ ভেদ করিয়া আমাদের পৃথিবীর উপরে আসিয়া পড়ে। কিন্তু বাতাস লইয়াই আমাদের বায়ুমণ্ডল নয়, ইহার মধ্যে আবার মেঘ আছে। মেঘ জিনিসটা বাতাসের মত স্বচ্ছ নয়। তাই মেঘ উঠিলে চন্দ্র সূর্য্য নক্ষত্র সকলি ঢাকা পড়িয়া যায়। তার পরে আবার সেই মেঘে বৃষ্টি হয়; বাতাস ছুটাছুটি করিয়া ঝড় তোলে। সূর্য্যের চারিদিকেও আমাদের বায়ুমণ্ডলের মত বাষ্পের আবরণ আছে। কিন্তু পৃথিবীকে ঘিরিয়া যেমন একটা আবরণ রহিয়াছে, সূর্য্যকে ঘিরিয়া সেই-রকম তিনটা আবরণ আছে। এই তিনটা লইয়াই সূর্য্যের আকাশ। আমাদের পৃখিবী সূর্য্যের মত জ্বলে না, ইহার উপরটা বেশ ঠাণ্ডা এই জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলও ঠাণ্ডা। কিন্তু সূর্য্য দিবারাত্রি জ্বলিতেছে, এই জন্য ইহার বাষ্পের তিনটা আবরণও জ্বলিয়া-পুড়িয়া সর্ব্বদা তাপ ও আলোক দিতেছে।