পাতা:গ্রীক ও হিন্দু - প্রফুল্লচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२०७ গ্রীক ও হিন্দু। সেই দশা ঘটিয়াছে। তাই হিন্দুকে যদিও এখনও কোন মতে অনৈতিক বলিতে পারা যায় না বটে ; তত্ৰচ কিন্তু সে নীতিতে কি সংসার কি সমাজ, কাহারই কোন প্রকৃত কাৰ্য্য সাধিত হইতে দেখা যায় না । গ্রীকের ধৰ্ম্মতত্বে, পারলৌকিক মুখে চুড়ান্ত সঙ্কেত পদার্থ জিউস ; পিতা, ভ্রাতা প্রভৃতির অনিষ্ট সাধনে ইহার ঐশ্বৰ্য্য অধিকার ;– গ্রীকের গৃঢ় জীবনও তাঁহাই । হিন্দুর চূড়ান্ত সঙ্কেত পদার্থ, "সুপর্ণম্ বিপ্রাঃ কবয়ো বচোভিঃ একম সস্তম্ বহুধা কল্পয়ন্তি ”—হিন্দুর গূঢ় জীবনও তাঁহাই। গ্রীকের যাগযজ্ঞাদি,—পশ্বাদি হনন করিয়া, প্রমিথিওসের কল্যাণে দেবতাদিগকে মাংসাদিশূন্ত তাহার নিঃসার হাড়গোড় মাত্র উৎসর্গ ও অর্পণ, এবং মাংসমেধাদি যাহা তন্দ্বারা মধুসংসোগে নিজের উদর পূরণ । আর হিন্দুর যাগযজ্ঞাদি,— দেবতাদিগকে সকল দিয়া, নিজের উপবাস । উভয়ের সাংসারিক জীবনও তাঁহাই। প্রকৃত ধৰ্ম্মতত্বমাত্রের দুইদিক, এক লৌকিক ও অপর পারলৌকিক । গ্রীকের ধৰ্ম্মতত্ত্ব, পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, লৌকিকভাবে অযথা লিপ্ত ; সুতরাং এমবিকৃত ঐশ্বরিক সত্তা ইহাদের অব-লম্বন। আর হিন্দুর ধৰ্ম্মতত্ত্ব পারলৌকিক ভাবে অযথা লিপ্ত ; এজন্য উহাও, লৌকিক-বিষয়িণী ঐশ্বরিক আজ্ঞা অবহেলা বা সম্যক পালন না করায়, ভ্রমসংযুক্ত। কিন্তু গ্ৰীকের বিকার আর এ বিকারে প্রভেদ আছে ;—অধমের দোষ এবং উন্নতের দেষে যে প্রভেদ, এখানেও সেই প্রভেদ । দোষের পরিমাণ অনুসারে অধঃপাতের পরিমাণ — এ কথা যদি সত্য হয়, তাহ হইলে এখানেও তাঁহার সুন্দর দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওয়া যাইতেছে। গ্রীক সভ্যতা এবং জাতীয় জীবন, হিন্দুর তুলনায় কত অল্পক্ষণস্থায়ী ও কতটা অধঃপাতগত হইয়াছিল, তাহ আলোচনা করিলেই প্রতীত হইতে পান্নিৰে ।