পাতা:গ্রীক ও হিন্দু - প্রফুল্লচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ প্রস্তাব । R82 পুনশ্চ প্লেটাে কহেন, এই পৃথিবী ও ইহার উপরিস্থ জীব ও জড় স্বাক্ট প্রবাহ, যাহা এক্ষণে আমরা দেখিতেছি, ইহাই প্রথম বা আদি নহে ; অথবা পৃথিবীর আকারও বরাবর এইরূপ ছিল না। এক এক যুগ গতে অগ্নির ক্রিয়াযোগে এই পৃথিবীতে এক এক প্রলয় উপস্থিত হইয়া থাকে এবং সেই প্রলয়ে, পৃথিবীর পূর্বগত আকার প্রকার এবং জড় ও জীব স্থইর প্রবাহ প্রভূতি, সমস্তই পরিবৰ্ত্তিত হইয়া যায় । এইরূপে পূৰ্ব্বে, পৃথিবীর আকার প্রকারে অনেক পরিবর্তন ঘটনা হইয়াছে এবং বিদ্যাবুদ্ধি, জ্ঞান ও সভ্যতাপূর্ণ অনেকবিধ মনুষ্যবংশ, আকার অবস্থা ও স্বভাবগত প্রভেদ সহ, উদয় ও বিলয় প্রাপ্ত হইয়া গিয়াছে। (৮) এই বিচিত্র কারণ হইতে স্বপ্ন সকল সংঘটিত হইতে পারে । এই ত্ৰিবিধ কারণের কার্য্য কিরূপে হয়, তাহা অনুধাবন করিয়া দেখিলে দেখিতে পাওয়া যায় যে, প্রথমতঃ দর্শন, শ্রবণ ও মনন, এই ত্ৰিবিধ উপায়ের দ্বারা বিষয় সকল স্মৃতিতে সংগৃহীত হয়। মানুষের কি নিদ্রা, কি জাগরণ, সকল সময়েতেই চিত্ত নিয়ত ক্রিয়াশীল, কিন্তু জ্ঞান নিদ্রাবস্থায় স্বযুপ্তি প্রাপ্ত হয়। জ্ঞানই চিত্তের ক্রিয়া সকলকে স্থসজ্জিত করিয়া থাকে। কিন্তু নিদ্রাকালে সেই জ্ঞানের স্বযুপ্তি হেতু স্থসজ্জিত করণের অভাবে, চিত্তক্রিয়া যদৃচ্ছভাবে প্রবাহিত হইতে থাকে ও তাঁহারই মধ্যে যে যে কাৰ্য্যগুলি কিছু চটকের, তাহাই স্বপ্ন বলিয়া জাগরিত অবস্থায় স্মরণ হয় ; এই গুলিকেই এলোমেলো এবং স্মৃতিজষ্ঠ স্বপ্ন নামে বলা যায় । দ্বিতীয়তঃ, স্বপ্লে কখনও কখনও স্বন্দর ও স্বসজ্জিত ভাবে এমন স্থান, জন ও ঘটনা সকল দৃষ্ট হয়, যাহা ইহজন্মে কখনও কোথাও চিত্তমধ্যে কোন প্রকারে প্রবেশ করিতে পারে নাই ; কাজেই এ গুলিকে জন্মান্তরীণ সংস্কার জন্ত স্বপ্ন বলা যায় । তৃতীয়তঃ, স্বপ্নে ঔষধাদির এমন উপদেশ এবং অপরাপর বিষয়েতেও কোন কোন আদেশ ও উপদেশাদি এমন প্রকারের পাওয়া যায় যে, যাহা কার্য্যে লাগাইলে ধ্রুব ফল ফলিয়া থাকে এবং ফলও পুনঃ এমন, যাহ মানুষের চেষ্টায় ফলাইতে পারা যায় নাই। এই তৃতীয় প্রকারের স্বপ্নকেই প্রত্যাদেশ বলা যায়। (৮) প্লেটো যে প্রকার সাময়িক প্রলয় বর্ণন করিয়াছেন, হিন্দুরাও সেই রূপে সামরিক প্রলয় এবং অধিকন্তু মহাপ্রলয়ও ঘোষণা করিয়া থাকেন। কিন্তু প্লেটোর বর্ণিত প্রলয়ের প্রকার ও প্রকরণ উভয়ই, হিন্দুর বর্ণনা হইতে অনেকটা স্বতন্ত্র।