৯৬
ঘরে-বাইরে
আমার ঘর বলে, তুই কোথায় যাবি,
বাইরে গিয়ে সব খােওয়াবি।
আমার প্রাণ বলে, তাের যা আছে সব
যাক-না উড়ে পুড়ে।
আচ্ছা, না হয় আমাদের সর্বনাশই হবে, তার বেশি তাে নয়। রাজি আছি, তাতেই রাজি আছি।
ওগাে, যায় যদি তাে যাক-না চুকে—
সব হারাব হাসিমুখে,
আমি এই চলেছি মরণসুধা
নিতে পরাণ পূরে।
আসল কথা হচ্ছে, নিখিল, আমাদের মন ভুলেছে, আমরা সুসাধ্য-সাধনের গণ্ডির মধ্যে টিঁকতে পারব না, আমরা অসাধ্য-সাধনের পথে বেরিয়ে পড়ব।
ওগাে আপন যারা কাছে টানে
এ রস তারা কেই বা জানে—
আমার বাঁকা পথের বাঁকা সে যে
ডাক দিয়েছে দূরে।
এবার বাঁকার টানে সােজার বােঝা
পড়ুক ভেঙেচুরে।
মনে হল, আমার স্বামীর কিছু বলবার আছে। কিন্তু তিনি বললেন না, আস্তে আস্তে চলে গেলেন।
সমস্ত দেশের উপর এই-যে একটা প্রবল আবেগ হঠাৎ ভেঙে পড়ল ঠিক এই জিনিসটাই আমার জীবনের মধ্যে আর-এক সুর নিয়ে ঢুকেছিল। আমার ভাগ্যদেবতার রথ আসছে, কোথা থেকে তার সেই চাকার শব্দে দিন-রাত্রি আমার বুকের ভিতর গুর্-গুর্ করছে। প্রতি মুহূর্তে মনে হতে লাগল, একটা কী পরমাশ্চর্য এসে পড়ল বলে— তার জন্যে আমি কিছুমাত্র দায়ী নই। পাপ? যে ক্ষেত্রে পাপ-পুণ্য, যে ক্ষেত্রে বিচার-বিবেক, যে ক্ষেত্রে দয়া-মায়া, সে ক্ষেত্র থেকে সম্পূর্ণ সরে যাবার পথ হঠাৎ আপনিই খুলে গেছে। আমি তাে একে কোনােদিন কামনা করি নি, এর জন্যে প্রত্যাশা করে বসে থাকি নি, আমার সমস্ত জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখাে, এর জন্যে আমার তাে কোনাে জবাবদিহি নেই। এতদিন একমাত্র আমি যার পূজা করে এলুম, বর দেবার বেলা এ যে এল আর-এক দেবতা। তাই, সমস্ত দেশ যেমন জেগে