পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘরে-বাইরে
১১৯

 বলে সে আমার পায়ে জড়িয়ে ধরল। তাকে বললুম আর দিন-দশেক পরে আমার কাছে আসতে। এই লােকটাকে যদি এখন দু হাজার টাকা দেওয়া যায় তা হলে একে কিনে রাখতে পারি। এরই মতাে মানুষকে দলে আনতে পারলে তবে কাজ হয়। কিছু বেশি করে টাকার জোগাড় করতে না পারলে কোনাে ফল হবে না।

 বিকেল-বেলায় বিমলা ঘরে আসবা মাত্র চৌকি থেকে উঠে তাকে বললুম, রানী, সব হয়ে এসেছে, আর দেরি নেই, এখন টাকা চাই।

 বিমলা বললে, টাকা? কত টাকা?

 আমি বললুম, খুব বেশি নয়, কিন্তু যেখান থেকে হােক টাকা চাই।

 বিমলা জিজ্ঞাসা করলে, কত চাই বলুন।

 আমি বললুম, আপাতত কেবল পঞ্চাশ হাজার মাত্র।

 টাকার সংখ্যাটা শুনে বিমলা ভিতরে ভিতরে চমকে উঠল, কিন্তু বাইরে সেটা গােপন করে গেল। বার বার সে কী করে বলবে যে, পারব না।

 আমি বললুম, রানী, অসম্ভবকে সম্ভব করতে পার তুমি। করেওছ। কী যে করেছ যদি দেখাতে পারতুম তাে দেখতে। কিন্তু এখন তার সময় নয়; একদিন হয়তাে সময় আসবে। এখন টাকা চাই।

 বিমলা বললে, দেব।

 আমি বুঝলুম, বিমলা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে, ওর গয়না বেচে দেবে। আমি বললুম, তােমার গয়না এখন হাতে রাখতে হবে, কখন কী দরকার হয় বলা যায় না।

 বিমলা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

 আমি বললুম, তােমার স্বামীর টাকা থেকে এ টাকা দিতে হবে।

 বিমলা আরাে স্তম্ভিত হয়ে গেল। খানিক পরে সে বললে, তাঁর টাকা আমি কেমন করে নেব?

 আমি বললুম, তার টাকা কি তােমার টাকা নয়?

 সে খুব অভিমানের সঙ্গেই বললে, নয়।

 আমি বললুম, তা হলে সে টাকা তারও নয়। সে টাকা দেশের; দেশের যখন প্রয়ােজন আছে তখন এ টাকা নিখিল দেশের কাছ থেকে চুরি করে রেখেছে।

 বিমলা বললে, আমি সে টাকা পাব কী করে?

 যেমন করে হােক। তুমি সে পারবে। যাঁর টাকা তুমি তাঁর কাছে এনে দেবে। বন্দে মাতরং! ‘বন্দে মাতরং’ এই মন্ত্রে আজ লােহার সিন্দুকের দরজা