পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘরে-বাইরে
১৩১

 বিমলার মনটাকে সেই উপরের হাওয়াতেই উড়িয়ে রাখবার জন্য পাঁচ হাজার টাকা সংক্ষেপে সেরে ফেলে, ফের আবার সেই মহিষমর্দিনীর পুজোর মন্ত্রণায় বসে গেলুম। পুজোটা হবে কবে এবং কখন? নিখিলের এলাকায় রুইমারিতে অঘ্রানের শেষে যে হােসেন গাজির মেলা হয় সেখানে লক্ষ লক্ষ লােক আসে, সেইখানে পুজোটা যদি দেওয়া যায় তা হলে খুব জমাট হয়। বিমলা উৎসাহিত হয়ে উঠল। ও মনে করলে, এ তাে বিলিতি কাপড় পােড়ানাে নয়, লােকের ঘর জ্বালানাে নয়, এত বড়ো সাধু প্রস্তাবে নিখিলের কোনাে আপত্তি হবে না। আমি মনে মনে হাসলুম। যারা ন বছর দিন-রাত্রি একসঙ্গে কাটিয়েছে তারাও পরস্পরকে কত অল্প চেনে! কেবল ঘরকন্নার কথাটুকুতেই চেনে, ঘরের বাইরের কথা যখন হঠাৎ উঠে পড়ে তখন তারা আর থই পায় না। ওরা ন বছর ধরে ঘরে বসে বসে এই কথাটাই ক্রমাগত বিশ্বাস করে এসেছে যে, ঘরের সঙ্গে বাইরের অবিকল মিল বুঝি আছেই। আজ ওরা বুঝতে পারছে, কোনােদিন যে দুটোকে মিলিয়ে দেওয়া হয় নি আজ তারা হঠাৎ মিলে যাবে কী করে!

 যাক! যারা ভুল বুঝেছিল তারা ঠেকতে ঠেকতে ঠিক করে বুঝে নিক, তা নিয়ে আমার বেশি চিন্তা করবার দরকার নেই। বিমলাকে তাে এই উদ্দীপনার বেগে বেলুনের মতাে অনেকক্ষণ উড়িয়ে রাখা সম্ভব নয়, অতএব এই হাতের কাজটা যত শীঘ্র পারা যায় সেরে নিতে হচ্ছে। বিমলা যখন চৌকি থেকে উঠে দরজা পর্যন্ত গেছে আমি নিতান্ত যেন উড়োরকম ভাবে বললুম, রানী, তাহলে টাকাটা কবে—

 বিমলা ফিরে দাঁড়িয়ে বললে, এই মাসের শেষে মাস-কাবারের সময়—

 আমি বললুম, না, দেরি হলে চলবে না।

 তােমার কবে চাই?

 কালই।

 আচ্ছা, কালই এনে দেব।