আমার স্বামী বললেন, না, সময় পাই নি।
মেজোরানী বললেন, দেখাে ভাই, তুমি বড়াে অসাবধান, ও টাকাটা—
স্বামী হেসে বললেন, সে যে আমার শােবার ঘরের পাশের ঘরে লােহার সিন্দুকে আছে।
যদি সেখান থেকে নেয়, বলা যায় কি?
আমার ও ঘরেও যদি চোর ঢােকে তা হলে কোন্ দিন তােমাকেও চুরি হতে পারে।
ওগাে, আমাকে কেউ নেবে না, ভয় নেই তােমার। নেবার মতাে জিনিস তােমার আপনার ঘরেই আছে। না ভাই, ঠাট্টা না, তুমি ঘরে টাকা রেখাে না।
সদর-খাজনা চালান যেতে আর দিন-পাঁচেক আছে, সেইসঙ্গেই ও টাকাটা আমি কলকাতার ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেব।
দেখাে ভাই, ভুলে বােস না। তােমার যেরকম ভােলা মন, কিছুই বলা যায় না।
এ ঘর থেকে যদি টাকা চুরি যায় তা হলে আমারই টাকা চুরি যাবে, তােমার কেন যাবে বউরানী?
ঠাকুরপাে, তােমার ঐ-সব কথা শুনলে আমার গায়ে জ্বর আসে। আমি কি আমার-তােমার ভেদ করে কথা কচ্ছি? তােমারই যদি চুরি যায় সে কি আমাকে বাজবে না? পােড়া বিধাতা সব কেড়ে নিয়ে আমার যে লক্ষ্মণ দেওরটি রেখেছেন তার মূল্য বুঝি আমি বুঝি নে? আমি ভাই, তােমাদের বড়ােরানীর মতাে দিনরাত্রি দেবতা নিয়ে ভুলে থাকতে পারি নে; দেবতা আমাকে যা দিয়েছেন সেই আমার দেবতার চেয়েও বেশি। কী লাে ছােটোরানী, তুই যে একেবারে কাঠের পুতুলের মতাে চুপ করে রইলি? জান ভাই ঠাকুরপাে, ছােটোরানী মনে ভাবে, আমি তােমাকে খােশামােদ করি। তা, তেমন দায়ে পড়লে খােশামােদই করতে হত। কিন্তু তুমি কি আমাদের তেমনি দেওর যে খােশামােদের অপেক্ষা রাখ? যদি হতে ঐ মাধব চক্রবর্তীর মতাে তা হলে আমাদের বড়ােরানীরও দেবসেবা আজ ঘুচে যেত, আধ-পয়সাটির জন্যে তােমার হাতে-পায়ে ধরাধরি করেই দিন কাটত। তাও বলি, তা হলে ওর উপকার হত, বানিয়ে বানিয়ে তােমার নিন্দে করবার এত সময় পেত না।
এমনি করে মেজোরানী অনর্গল বকে যেতে লাগলেন, তারই মাঝে মাঝে ছেঁচকিটা ঘণ্টটা চিংড়িমাছের মুড়ােটার প্রতিও ঠাকুরপাের মনােযােগ আকর্ষণ করা চলতে থাকল। আমার তখন মাথা ঘুরছে। আর তাে সময় নেই, এখনই