আমি বললুম, আছে সময়।
অমূল্য চলে গেল। ঘরে ঢুকেই সন্দীপ বললে, অমূল্যর হাতে একটা কী বাক্স দিলে, ওটা কিসের বাক্স?
বাক্সটা সন্দীপের চোখ এড়াতে পারে নি। আমি একটু শক্ত হয়েই বললুম, আপনাকে যদি বলবার হত তা হলে আপনার সামনেই দিতুম।
তুমি কি ভাবছ অমূল্য আমাকে বলবে না?
না, বলবে না।
সন্দীপের রাগ আর চাপা রইল না; একেবারে আগুন হয়ে উঠে বললে, তুমি মনে করছ তুমি আমার উপর প্রভুত্ব করবে। পারবে না। ঐ অমূল্য, ওকে যদি আমার পায়ের তলায় মাড়িয়ে দিই তা হলে সেই ওর সুখের মরণ হবে। ওকে তুমি তােমার পদানত করবে? আমি থাকতে সে হবে না।
দুর্বল, দুর্বল! এতদিন পর সন্দীপ বুঝতে পেরেছে, ও আমার কাছে দুর্বল। তাই হঠাৎ, এই অসংযত রাগ। ও বুঝতে পেরেছে, আমার যে শক্তি আছে তার সঙ্গে জোর জবরদস্তি খাটবে না; আমার কটাক্ষের ঘায়ে ওর দুর্গের প্রাচীর আমি ভেঙে দিতে পারি। সেইজন্যেই আজ এই আস্ফালন। আমি একটি কথা না বলে একটুখানি কেবল হাসলুম। এতদিন পরে আমি ওর উপরের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছি; আমার এ জায়গাটুকু যেন না হারায়, যেন না নাবি। আমার দুর্গতির মধ্যেও যেন আমার মান একটু থাকে।
সন্দীপ বললে, আমি জানি তােমার ও বাক্স গয়নার বাক্স।
আমি বললুম, আপনি যেমন-খুশি আন্দাজ করুন, আমি বলব না।
তুমি অমূল্যকে আমার চেয়ে বেশি বিশ্বাস কর? জান, ঐ বালক আমার ছায়ার ছায়া, আমার প্রতিধ্বনির প্রতিধ্বনি, আমার পাশের থেকে সরে গেলে ও কিছুই নয়।
যেখানে ও তােমার প্রতিধ্বনি নয়, সেইখানে ও অমূল্য, সেইখানে আমি ওকে তােমার প্রতিধ্বনির চেয়ে বিশ্বাস করি।
মায়ের পূজা-প্রতিষ্ঠার জন্যে তােমার সমস্ত গয়না আমাকে দিতে প্রতিশ্রুত আছ, সে কথা ভুললে চলবে না। সে তােমার দেওয়াই হয়ে গেছে।
দেবতা যদি আমার কোনাে গয়না বাকি রাখেন তা হলে সেই গয়না দেবতাকে দেব। আমার যে গয়না চুরি যায় সে গয়না দেব কেমন করে?
দেখাে, তুমি আমার কাছ থেকে অমন করে ফসকে যাবার চেষ্টা কোরাে না। এখন আমার কাজ আছে, সেই কাজ আগে হয়ে যাক, তার পরে তােমাদের ঐ মেয়েলি ছলাকলা-বিস্তারের সময় হবে। তখন সেই লীলায় আমিও যােগ দেব।