পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘরে-বাইরে
১৯১

বেরিয়ে পড়ল। বুকের মধ্যে তার পা চেপে ধরলুম— ঐ পায়ের চিহ্ন চিরজীবনের মতো ঐখানে আঁকা হয়ে যায় না কি?

 এইবার তো সব কথা খুলে বললেই হত। কিন্তু এর পরে কি আর কথা আছে? থাক্ গে আমার কথা। তিনি আস্তে আস্তে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আশীর্বাদ পেয়েছি। কাল যে অপমান আমার জন্যে আসছে সেই অপমানের ডালি সকলের সামনে মাথায় তুলে নিয়ে আমার দেবতার পায়ে সরল হয়ে প্রণাম করতে পারব।

 কিন্তু এই মনে করে আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে, আজ ন বছর আগে যে নহবৎ বেজেছিল সে আর ইহজন্মে কোনোদিন বাজবে না। এ ঘরে আমাকে বরণ করে এনেছিল যে! ওগো, এই জগতে কোন্ দেবতার পায়ে মাথা কুটে মরলে সেই বউ চন্দন-চেলি পরে সেই বরণের পিঁড়িতে এসে দাঁড়াতে পারে! কতদিন লাগবে আর— কত যুগ— কত যুগান্তর— সেই ন বছর আগেকার দিনটিতে আর-একটিবার ফিরে যেতে! দেবতা নতুন সৃষ্টি করতে পারেন, কিন্তু ভাঙা সৃষ্টিকে ফিরে গড়তে পারেন এমন সাধ্য কি তাঁর আছে?