নিখিলেশের আত্মকথা
আজ আমরা কলকাতায় যাব। সুখদুঃখ কেবলই জমিয়ে তুলতে থাকলে বােঝা ভারী হয়ে ওঠে। কেননা, বসে থাকাটা মিথ্যে, সঞ্চয় করাটা মিথ্যে। আমি যে এই ঘরের কর্তা এটা বানানাে জিনিস, সত্য এই যে, আমি জীবন-পথের পথিক। ঘরের কর্তাকে তাই বারে বারে ঘা লাগবে, তার পরে শেষ আঘাত আছে মৃত্যু। তােমার সঙ্গে আমার যে মিলন সে মিলন চলার মুখে— যত দূর পর্যন্ত এক পথে চলা গেল তত দূর পর্যন্তই ভালাে, তার চেয়ে বেশি টানাটানি করতে গেলেই মিলন হবে বাঁধন। সে বাঁধন আজ রইল পড়ে, এবার বেরিয়ে পড়লুম চলতে চলতে যেটুকু চোখে চোখে মেলে, হাতে হাতে ঠেকে, সেইটুকুই ভালাে। তার পরে? তার পরে আছে অনন্ত জগতের পথ, অসীম জীবনের বেগ। তুমি আমাকে কতটুকু বঞ্চনা করতে পার প্রিয়ে। সামনে যে বাঁশি বাজছে কান দিয়ে যদি শুনি তাে শুনতে পাই, বিচ্ছেদের সমস্ত ফাটলগুলাের ভিতর দিয়ে তার মাধুর্যের ঝর্না ঝরে পড়ছে। লক্ষ্মীর অমৃতভাণ্ডার ফুরােবে না বলেই মাঝে মাঝে তিনি আমাদের পাত্র ভেঙে দিয়ে কাঁদিয়ে হাসেন। আমি ভাঙা পাত্র কুড়ােতে যাব না, আমি আমার অতৃপ্তি বুকে নিয়েই সামনে চলে যাব।
মেজোরানীদিদি এসে বললেন, ঠাকুরপাে, তােমার বইগুলাে সব বাক্স ভরে গােরুর গাড়ি বােঝাই করে যে চলল তার মানে কী বলাে তাে?
আমি বললুম, তার মানে ঐ বইগুলাের উপর থেকে এখনাে মায়া কাটাতে পারি নি।
মায়া কিছু কিছু থাকলেই যে বাঁচি। কিন্তু, এখানে আর ফিরবে না নাকি?
আনাগােনা চলবে, কিন্তু পড়ে থাকা আর চলবে না।
সত্যি নাকি? তা হলে একবার এসাে, একবার দেখাে’সে কত জিনিসের উপরে আমার মায়া।
এই বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন। তাঁর ঘরে গিয়ে দেখি ছোটো-বড়াে নানা রকমের বাক্স আর পুঁটুলি। একটা বাক্স খুলে দেখালেন, এই দেখাে ঠাকুরপাে, আমার পান সাজার সরঞ্জাম। কেয়াখয়ের গুঁড়িয়ে বােতলের মধ্যে পুরেছি, এই-সব দেখছ এক-এক টিন মসলা। এই দেখাে