কাছ থেকে তােমরা সহজে ছাড়া পাবে না গাে! ডানা যদি মেলতে চাও আমাদের সুদ্ধু নিতে হবে, ফেলতে পারবে না। সেইজন্যেই তাে এই-সব বােঝা সাজিয়ে রেখেছি। তােমাদের একেবারে হালকা হতে দিলে কি আর রক্ষা আছে!
আমি হেসে বললুম, তাই তাে দেখছি, বােঝা বলে বেশ স্পষ্টই বােঝা যাচ্ছে। কিন্তু এই বােঝা বইবার মজুরি তােমরা পুষিয়ে দাও বলেই আমরা নালিশ করি নে।
মেজোরানী বললেন, আমাদের বােঝা হচ্ছে ছােটো জিনিসের বােঝা। যাকেই বাদ দিতে যাবে সেই বলবে, আমি সামান্য, আমার ভার কতটুকুই বা। এমনি করে হালকা জিনিস দিয়েই আমরা তােমাদের মােট ভারী করি।— কখন বেরােতে হবে, ঠাকুরপাে?
রাত্তির সাড়ে এগারােটায়। সে এখনাে ঢের সময় আছে।
দেখাে ঠাকুরপাে, লক্ষ্মীটি, আমার একটি কথা রাখতে হবে আজ সকাল-সকাল খেয়ে নিয়ে দুপুরবেলায় একটু ঘুমিয়ে নিয়াে, গাড়িতে রাত্তিরে তাে ভালাে ঘুম হবে না। তােমার শরীর এমন হয়েছে, দেখলেই মনে হয়, আর-একটু হলেই ভেঙে পড়বে। চলাে, এখনই তােমাকে নাইতে যেতে হবে।
এমন সময় ক্ষেমা মস্ত একটা ঘােমটা টেনে মৃদুস্বরে বললে, দারােগাবাবু কাকে সঙ্গে করে এনেছে, মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে চায়।
মেজোরানী রাগ করে উঠে বললেন, মহারাজ চোর না ডাকাত যে দারােগা তার সঙ্গে লেগেই রয়েছে! বলে আয় গে, মহারাজ এখন নাইতে গেছেন।
আমি বললুম, একবার দেখে আসি গে, হয়তাে কোনাে জরুরি কাজ আছে।
মেজোরানী বললেন, না, সে হবে না। ছােটোরানী কাল বিস্তর পিঠে তৈরি করেছে, দারােগাকে সেই পিঠে খেতে পাঠিয়ে তার মেজাজ ঠাণ্ডা করে রাখছি।
বলে তিনি আমাকে হাত ধরে টেনে স্নানের ঘরের মধ্যে ঠেলে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি ভিতর থেকে বললুম, আমার সাফ কাপড় যে এখনাে—
তিনি বললেন, সে আমি ঠিক করে রাখব, ততক্ষণ তুমি স্নান করে নাও।