পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০০
ঘরে-বাইরে

রইল না যে চাবি হারায় নি, কেউ একজন রিঙ থেকে খুলে নিয়েছে। কে নিতে পারে? এ ঘরে তাে—

 মেজোরানী বললেন, ব্যস্ত হােয়ো না, আগে তুমি খেয়ে নাও। আমার বিশ্বাস, তুমি অসাবধান বলেই ছােটোরানী ঐ চাবিটা বিশেষ করে তার বাক্সে তুলে রেখেছে।

 আমার ভারি গােলমাল ঠেকতে লাগল। আমাকে না জানিয়ে বিমল রিঙ থেকে চাবি বের করে নেবে, এ তার স্বভাব নয়।

 আমার খাবার সময় আজ বিমল ছিল না, সে তখন রান্নাঘর থেকে ভাত আনিয়ে অমূল্যকে নিজে বসে খাওয়াচ্ছিল। মেজোরানী তাকে ডাকতে পাঠাচ্ছিলেন, আমি বারণ করলুম।

 খেয়ে উঠেছি এমন সময় বিমল এল। আমার ইচ্ছা ছিল, মেজোরানীর সামনে এই চাবি সরানাের কথাটার আলােচনা না হয়। কিন্তু সে আর ঘটল না। বিমল আসতেই তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ঠাকুরপাের লােহার সিন্দুকের চাবি কোথায় আছে জানিস?

 বিমল বললে, আমার কাছে।

 মেজোরানী বললেন, আমি তাে বলেছিলুম। চার দিকে চুরি ডাকাতি হচ্ছে, ছােটোরানী বাইরে দেখাত ওর ভয় নেই, কিন্তু ভিতরে ভিতরে সাবধান হতে ছাড়ে নি।

 বিমলের মুখ দেখে মনে কেমন একটা খটকা লাগল; বললুম, আচ্ছা, চাবি এখন তােমার কাছেই থাক্‌, বিকেলে টাকাটা বের করে নেব।

 মেজোরানী বলে উঠলেন, আবার বিকেলে কেন ঠাকুরপাে, এই বেলা ওটা বের করে নিয়ে খাজাঞ্চির কাছে পাঠিয়ে দাও।

 বিমল বলল, টাকাটা আমি বের করে নিয়েছি।

 চমকে উঠলুম।

 মেজোরানী জিজ্ঞাসা করলেন, বের করে নিয়ে রাখলি কোথায়?

 বিমল বলল, খরচ করে ফেলেছি।

 মেজোরানী বললেন, ওমা, শােনাে একবার! এত টাকা খরচ করলি কিসে?

 বিমল তার কোনাে উত্তর করলে না। আমিও তাকে কোনাে কথা জিজ্ঞাসা করলুম না; দরজা ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলুম। মেজোরানী বিমলকে কী একটা বলতে যাচ্ছিলেন, থেমে গেলেন; আমার মুখের দিকে চেয়ে বললেন, বেশ করেছে নিয়েছে। আমার স্বামীর পকেটে বাক্সে যা-কিছু টাকা থাকত