মক্ষী বলল, সন্দীপবাবু বৈঠকখানায় আসছিলেন, সে ওঁর পথ আটক করে বললে ‘হুকুম নেই’।
নিখিল জিজ্ঞাসা করলে, কার হুকুম নেই?
মক্ষী বললে, তা কেমন করে বলব?
রাগে ক্ষোভে মক্ষীর চোখ দিয়ে জল পড়ে-পড়ে আরকি।
দরােয়ানকে নিখিল ডেকে পাঠালে। সে বললে, হুজুর, আমার তাে কসুর নেই। হুকুম তামিল করেছি।
কার হুকুম?
বড়ােরানীমা মেজোরানীমা আমাকে ডেকে বলে দিয়েছেন।
ক্ষণকালের জন্যে সবাই আমরা চুপ করে রইলুম।
দরােয়ান চলে গেলে মক্ষী বললে, নন্কুকে ছাড়িয়ে দিতে হবে।
নিখিল চুপ করে রইল। আমি বুঝলুম, ওর ন্যায়বুদ্ধিতে খট্কা লাগল। ওর খট্কার আর অন্ত নেই।
কিন্তু বড়াে শক্ত সমস্যা। সােজা মেয়ে তাে নয়। নন্কুকে ছাড়ানাের উপলক্ষে জায়েদের উপর অপমানের শােধ তােলা চাই।
নিখিল চুপ করেই রইল। তখন মক্ষীর চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে পড়তে লাগল। নিখিলের ভালােমানুষির ’পরে তার ঘৃণার আর অন্ত রইল না।
নিখিল কোনাে কথা না বলে উঠে ঘর থেকে চলে গেল।
পরদিন সেই দরােয়ানকে দেখা গেল না। খবর নিয়ে শুনলুম, তাকে নিখিল মফস্বলের কোন কাজে নিযুক্ত করে পাঠিয়েছে— দরােয়ানজির তাতে লাভ বৈ ক্ষতি হয় নি।
এইটুকুর ভিতরে নেপথ্যে কত ঝড় বয়ে গেছে সে তাে আভাসে বুঝতে পারছি। বারে বারে কেবল এই কথাই মনে হয়— নিখিল অদ্ভুত মানুষ, একেবারে সৃষ্টিছাড়া।
এর ফল হল এই যে, এর পরে কিছুদিন মক্ষী রােজই বৈঠকখানায় এসে বেহারাকে দিয়ে আমাকে ডাকিয়ে এনে আলাপ করতে আরম্ভ করলে— কোনােরকম প্রয়ােজনের কিংবা আকস্মিকতার ছুতােটুকু পর্যন্ত রাখলে না।
এমনি করেই ভাবভঙ্গি ক্রমে আকার-ইঙ্গিতে, অস্পষ্ট ক্রমে স্পষ্টতায় জমে উঠতে থাকে। এ যে ঘরের বউ, বাইরের পুরুষের পক্ষে একেবারে নক্ষত্রলােকের মানুষ। এখানে কোনাে বাঁধা পথ নেই।
এই পথহীন শূন্যের ভিতর দিয়ে ক্রমে ক্রমে টানাটানি, জানাজানি, অদৃশ্য হাওয়ায় হাওয়ায় সংস্কারের পর্দা একটার পর আর-একটা উড়িয়ে দিয়ে