পাতা:ঘরোয়া.djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বিয়ে বোধ হয় জোড়াসাঁকোতেই হল, ঠিক মনে পড়ছে না। বাসিবিয়ের দিন খবর এল সারদাপিসেমশায় মারা গেছেন। ব্যস্‌, সব চুপচাপ, বিবাহের উৎসব ঠাণ্ডা। কেমন একটা ধাক্কা পেলেন, সেই সময় থেকেই রবিকাকার সাজসজ্জা একেবারে বদলে গেল। শুধু একখানা চাদর গায়ে দিতেন, বাইরে যেতে হলে গেরুয়া রঙের একটা আলখাল্লা পরতেন। মাছমাংস ছেড়ে দিলেন, মাথায় লম্বা লম্বা চুল রাখলেন। সেই চুল সেই সাজ আবার শেষে কত নকল করলে ছোকরা কবির দল।

 রবিকাকাকে প্রায়ই পরগনায় যেতে হত। নতুনকাকীমাও মারা গেলেন, জ্যোতিকাকামশায় ফ্রেনোলজি শুরু করলেন, লোক ধরে ধরে মাথা দেখেন আর ছবি আঁকেন। কিছুকাল আমাদের নাটক অভিনয় সব বন্ধ। এ যেন একটা অধ্যায় শেষ হয়ে গেল।

 ইতিমধ্যে আমরা বড়ো হয়েছি, স্কুল ছেড়েছি, বিয়েও হয়েছে। আমার আর সমরদার বিয়ের দিন রথী জন্মায়। তার পর এক ড্রামাটিক ক্লাব সৃষ্টি করা গেল। রবিকাকা খাস বৈঠকে ব্রাউনিং পড়ে আমাদের শোনান, হেম ভট্ট রামায়ণ পড়েন। সাহিত্যের বেশ একটা চর্চা হত। নানা রকমের এ বই সে বই পড়া হয়।

 একবার ড্রামাটিক ক্লাবে ‘অলীকবাবু’ অভিনয় হয়। অলীকবাবু জ্যোতিকাকামশায়ের লেখা, ফরাসী গল্প, মোলেয়ারের একটা নাটক থেকে নেওয়া। সেই ফরাসী গল্প উনি বাংলায় রূপ দিলেন। অত তো পাকা লিখিয়ে ছিলেন, কিন্তু ফরাসী ছায়া থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। নয়তো হেমাঙ্গিনী কি আমাদের দেশের মেয়ে? এখনকার কালে হলেও সম্ভব ছিল, সেকালে অসম্ভব। এই অবস্থায় আমরা যখন প্লে করি রবিকাকা তো অনেক অদল-বদল করে দিয়ে তা ফরাসী গন্ধ থেকে মুক্ত করলেন। এইখানেই হল রবিকাকার আর্ট। আর করলেন কী, হেমাঙ্গিনীর প্রার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিলেন। আগে ছিল এক অলীকবাবুই নানা সাজে ঘুরে ফিরে এসে বাপকে ভুলিয়ে হেমাঙ্গিনীকে বিয়ে করে। রবিকাকা সেখানে অনেকগুলো লোক এনে ফেললেন। তাতে হল কী,

১০১