পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীবিলাস
১০৯

 ঠিক এমন সংকটের সময় বলিলাম, “দামিনী, একটি পথ আছে, যদি অভয় দাও তো বলি।”

 দামিনী বলিল, “বলো শুনি।”

 আমি বলিলাম, “যদি আমার মতো মানুষকে বিবাহ করা, তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তবে —”

 দামিনী আমাকে থামাইয়া দিয়া বলিল, “ও কী কথা বলিতেছ বিলাসবাবু। তুমি কি পাগল হইয়াছ।”

 আমি বলিলাম, “মনে করো-না পাগলই হইয়াছি। পাগল হইলে অনেক কঠিন কথা অতি সহজে মীমাংসা করিবার শক্তি জন্মায়। পাগলামি আরব্য-উপন্যাসের সেই জুতা, যা পায়ে দিলে সংসারের হাজার হাজার বাজে কথাগুলো একেবারে ডিঙাইয়া যাওয়া যায়।”

 “বাজে কথা? কাকে তুমি বল বাজে কথা।”

 “এই যেমন, লোকে কী বলিবে, ভবিষ্যতে কী ঘটিবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

 দামিনী বলিল, “আর আসল কথা?”

 আমি বলিলাম, “কাকে বল তুমি আসল কথা।”

 “এই যেমন, আমাকে বিবাহ করিলে তোমার কী দশা হইবে।”

 “এইটেই যদি আসল কথা হয় তবে আমি নিশ্চিন্ত। কেননা, আমার দশা এখন যা আছে তার চেয়ে খারাপ হইবে না। দশাটাকে সম্পূর্ণ ঠাঁই-বদল করাইতে পারিলেই বাঁচিতাম, অন্ততপক্ষে পাশ ফিরাইতে পারিলেও একটুখানি আরাম পাওয়া যায়।”