পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
চতুরঙ্গ

 আমি বলিলাম, “দামিনী, তোমাকে নিজে গিয়া নিমন্ত্রণ করিয়া আসিতে হইবে; ‘পত্রের দ্বারা নিমন্ত্রণ, ত্রুটি মার্জনা—’ এখানে চলিবে না। একলাই যাইতে পারিতাম, কিন্তু আমি ভীতু মানুষ। সে হয়তো এতক্ষণে নদীর ওপারে গিয়া চক্রবাকদের পিঠের পালক সাফ করা তদারক করিতেছে, সেখানে তুমি ছাড়া যাইতে পারে এমন বুকের পাটা আর কারো নাই।”

 দামিনী হাসিয়া কহিল, “সেখানে আর কখনো যাইব না, প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম।”

 আমি বলিলাম, “আহার লইয়া যাইবে না, এই প্রতিজ্ঞা; আহারের নিমন্ত্রণ লইয়া যাইবে না কেন।”

 এবারে কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটিল না। দুজনে দুই হাত ধরিয়া শচীশকে কলিকাতায় গ্রেপ্তার করিয়া আনিলাম। ছোটো ছেলে খেলার জিনিস পাইলে যেমন খুশি হয় শচীশ আমাদের বিবাহের ব্যাপার লইয়া তেমনি খুশি হইয়া উঠিল। আমরা ভাবিয়াছিলাম, চুপচাপ করিয়া সারিব; শচীশ কিছুতেই তা হইতে দিল না। বিশেষত, জ্যাঠামশায়ের সেই মুসলমানপাড়ার দল যখন খবর পাইল তখন তারা এমনি হল্লা করিতে লাগিল যে পাড়ার লোকে ভাবিল, কাবুলের আমির আসিয়াছে, বা অন্তত হাইদ্রাবাদের নিজাম।

 আরে ধুম হইল কাগজে। পরবারের পূজার সংখ্যায় জোড়া বলি হইল। আমরা অভিশাপ দিব না। জগদম্বা সম্পাদকের তহবিল বৃদ্ধি করুন এবং পাঠকদের নররক্তের নেশায় অন্তত এবারকার মতো কোনো বিষয় না ঘটুক।