পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬

শচীশ

নাস্তিক জগমোহন মৃত্যুর পূর্বে ভাইপো শচীশকে বলিলেন, “যদি শ্রাদ্ধ করিবার শখ থাকে বাপের করিস, জ্যাঠার নয়।”

 তাঁর মৃত্যুর বিবরণটা এই।—

 যে বছর কলিকাতা শহরে প্রথম প্লেগ দেখা দিল তখন প্লেগের চেয়ে তার রাজ-তক‍্মা পরা চাপরাসির ভয়ে লোকে ব্যস্ত হইয়াছিল। শচীশের বাপ হরিমোহন ভাবিলেন, তাঁর প্রতিবেশী চামারগুলোকে সকলের আগে প্লেগে ধরিবে, সেইসঙ্গে তাঁরও গুষ্টিসুদ্ধ সহমরণ নিশ্চিত। ঘর ছাড়িয়া পালাইবার পূর্বে তিনি একবার দাদাকে গিয়া বলিলেন, “দাদা, কালনায় গঙ্গার ধারে বাড়ি পাইয়াছি, যদি—”

 জগমোহন বলিলেন, “বিলক্ষণ! এদের ফেলিয়া যাই কী করিয়া।”

 “কাদের।”

 “ঐ-যে চামারদের।”

 হরিমোহন মুখ বাঁকাইয়া চলিয়া গেলেন। শচীশকে তার মেসে গিয়া বলিলেন, “চল্।”

 শচীশ বলিল, “আমার কাজ আছে।”

 “পাড়ার চামারগুলোর মুর্দফরাশির কাজ?”

 “আজ্ঞা হাঁ, যদি দরকার হয় তবে তো—”

 “আজ্ঞা হাঁ বৈকি! যদি দরকার হয় তবে তুমি তোমার চোদ্দপুরুষকে নরকস্থ করিতে পারো। পাজি, নচ্ছার, নাস্তিক!”