পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
চতুরঙ্গ

 এমন সময় শোনা গেল, চাটগাঁয়ের কাছে কোন্-এক জায়গায় শচীশ, আমাদের শচীশ, লীলানন্দস্বামীর সঙ্গে কীর্তনে মাতিয়া করতাল বাজাইয়া পাড়া অস্থির করিয়া নাচিয়া বেড়াইতেছে।

 একদিন কোনোমতে ভাবিয়া পাই নাই, শচীশের মতো মানুষ কেমন করিয়া নাস্তিক হইতে পারে; আজ কিছুতে বুঝিতে পারিলাম না, লীলানন্দস্বামী তাকে কেমন করিয়া নাচাইয়া লইয়া বেড়ায়।

 এ দিকে, আমরা মুখ দেখাই কেমন করিয়া। শত্রুর দল যে হাসিবে। শত্রুও তত এক-আধজন নয়।

 দলের লোক শচীশের উপর ভয়ংকর চটিয়া গেল। অনেকেই বলিল, তারা প্রথম হইতেই স্পষ্ট জানিত, শচীশের মধ্যে বস্তু কিছুই নাই— কেবল ফাঁকা ভাবুকতা।

 আমি যে শচীশকে কতখানি ভালোবাসি এবার তা বুঝিলাম। আমাদের দলকে সে যে এমন করিয়া মৃত্যুবাণ হানিল, তবু কিছুতে তার উপর রাগ করিতে পারিলাম না।

গেলাম লীলানন্দস্বামীর খোঁজে। কত নদী পার হইলাম, মাঠ ভাঙিলাম, মুদির দোকানে রাত কাটাইলাম, অবশেষে এক গ্রামে গিয়া শচীশকে ধরিলাম। তখন বেলা দুটো হইবে।

 ইচ্ছা ছিল, শচীশকে একলা পাই। কিন্তু জো কী। যে শিষ্যবাড়িতে স্বামীজি আশ্রয় লইয়াছেন তার দাওয়া আঙিনা