পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
চতুরঙ্গ

আমার সময় নাই।”

 সময় নাই! শিবতোষ কাছে আসিয়া দেখিল, দামিনী অন্ধকার ঘরে বসিয়া গহনার বাক্স খুলিয়া গহনাগুলি বাহির করিয়াছে। জিজ্ঞাসা করিল, “এ কী করিতেছ।”

 দামিনী কহিল, “আমি গহনা গুছাইতেছি।”

 এইজন্যই সময় নাই? বটে? পরদিন দামিনী লোহার সিন্ধুক খুলিয়া দেখিল, তার গহনার বাক্স নাই। স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিল, “আমার গহনা?” স্বামী বলিল, “সে তো তুমি তোমার গুরুকে নিবেদন করিয়াছ। সেইজন্যই তিনি ঠিক সেই সময়ে তোমাকে ডাকিয়াছিলেন, তিনি যে অন্তর্যামী; তিনি তোমার কাঞ্চনের লোভ হরণ করিলেন।”

 দামিনী আগুন হইয়া কহিল, “দাও আমার গহনা।”

 স্বামী জিজ্ঞাসা করিল, “কেন, কী করিবে।”

 দামিনী কহিল, “আমার বাবার দান, সে আমি আমার বাবাকে দিব।”

 শিবতোষ কহিল, “তার চেয়ে ভালো জায়গায় পড়িয়াছে। বিষয়ীর পেট না ভরাইয়া ভক্তের সেবায় তাহার উৎসর্গ হইয়াছে।

 এমনি করিয়া ভক্তির দস্যুবৃত্তি শুরু হইল। জোর করিয়া দামিনীর মন হইতে সকল প্রকার বাসনা-কামনার ভূত ঝাড়াইবার জন্য পদে পদে ওঝার উৎপাত চলিতে লাগিল। যে সময়ে দামিনীর বাপ এবং তার ছোটো ছোটো ভাইরা উপবাসে মরিতেছে সেই সময়ে বাড়িতে প্রত্যহ ষাট-সত্তর জন ভক্তের