পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শচীশ
৫৩

নিঃশব্দে একেবারে চৌচির হইয়া ফাটিয়া গেল, আত্মোৎসর্গের ফুলটি উপরের দিকে শিশির-ভরা মুখটি তুলিয়া ধরিল। দামিনীয় সেবা এখন এমন সহজে এমন সুন্দর হইয়া উঠিল যে, তার মাধুর্যে ভক্তদের সাধনার উপরে ভক্তবৎসলের যেন বিশেষ একটি বর আসিয়া পৌঁছিল।

 এমনি করিয়া দামিনী যখন স্থির সৌদামিনী হইয়া উঠিয়াছে, শচীশ তার শোভা দেখিতে লাগিল। কিন্তু, আমি বলিতেছি, শচীশ কেবল শোভাই দেখিল, দামিনীকে দেখিল না।

 শচীশের বসিবার ঘরে চীনামাটির ফলকের উপর লীলানন্দস্বামীর ধ্যানমূর্তির একটি ফোটোগ্রাফ ছিল। একদিন সে দেখিল তাহা ভাঙিয়া মেঝের উপর টুকরা টুকরা হইয়া পড়িয়া আছে। শচীশ ভাবিল, তার পোষা বিড়ালটা এই কাণ্ড করিয়াছে। মাঝে মাঝে আরো এমন অনেক উপসর্গ দেখা দিতে লাগিল যা বন্য বিড়ালেরও অসাধ্য।

 চারি দিকের আকাশে একটা চঞ্চলতার হওয়া উঠিল। একটা অদৃশ্য বিদ্যুৎ ভিতরে ভিতরে খেলিতে লাগিল। অন্যের কথা জানি না, ব্যথায় আমার মনটা টন‍্টন্ করিতে থাকিত। এক-একবার ভাবিতাম, দিনরাত্রি এই রসের তরঙ্গ আমার সহিল না; ইহার মধ্য হইতে একেবারে এক ছুটে দৌড় দিব— সেই-যে চামারদের ছেলেগুলাকে লইয়া সর্বপ্রকার-রস-বর্জিত বাংলা বর্ণমালার যুক্ত-অক্ষরের আলোচনা চলিত সে আমার বেশ ছিল।