পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
চতুরঙ্গ

দেখি না। ঘরেই থাকে, সে ঘরের দরজা বন্ধ।

 কিছুদিন যায়। একদিন গুরুজি দুপুরবেলা ঘুমাইতেছেন, আমি ছাদের বারান্দায় বসিয়া চিঠি লিখিতেছি, এমন সময়ে শচীশ হঠাৎ আসিয়া আমার দিকে দৃক‍্পাত না করিয়া দামিনীর বন্ধ দরজায় ঘা মারিয়া বলিল, “দামিনী, দামিনী?”

 দামিনী তখনই দরজা খুলিয়া বাহির হইল। শচীশের একি চেহারা। প্রচণ্ড ঝড়ের ঝাপটা-খাওয়া ছেঁড়া-পাল ভাঙা-মাস্তুল জাহাজের মতো ভাবখানা। চোখ দুটো কেমনতরো, চুল উস্কোখুস্কো, মুখ রোগা, কাপড় ময়লা।

 শচীশ বলিল, “দামিনী, তোমাকে চলিয়া যাইতে বলিয়াছিলাম— আমার ভুল হইয়াছিল, আমাকে মাপ করো।”

 দামিনী হাত জোড় করিয়া বলিল, “ওকি কথা আপনি বলিতেছেন!”

 “না, আমাকে মাপ করে। আমাদেরই সাধনার সুবিধার জন্য তোমাকে ইচ্ছামত ছাড়িতে বা রাখিতে পারি এত বড় অপরাধের কথা আমি কখনো আর মনেও আনিব না— কিন্তু তোমার কাছে আমার একটি অনুরোধ আছে, সে তোমাকে রাখিতেই হইবে।”

 দামিনী তখনই নত হইয়া শচীশের দুই পা ছুঁইয়া বলিল, “আমাকে হুকুম করো তুমি।”

 শচীশ বলিল, “আমাদের সঙ্গে তুমি যোগ দাও, অমন করিয়া তফাত হইয়া থাকিয়ো না।”

 দামিনী কহিল, “তাই যোগ দিব, আমি কোনো অপরাধ