পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চমৎকুমারী

বললেন, খবরদার হাত পা ছুড়বেন না, তা হলে পড়ে যাবেন, কোমর ভাঙবে, পাঁজরা ভাঙবে। এত আপত্তি কিসের? আমাকে কি অচ্ছুত হরিজন ভেবেছেন না সেকেলে বঠ্‌ঠাকুর ঠাউরেছেন যে ছুঁলেই আপনার ধর্মনাশ হবে? মনে মনে ধ্যান করুন—আপনি একটা দুরন্ত খুকী, রাস্তায় খেলতে খেলতে আছাড় খেয়েছেন, আর আমি আপনার স্নেহময়ী দিদিমা, কোলে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছি।

 আপত্তি নিষ্ফল জেনে মনোলোভা চুপ করে আড়ষ্ট হয়ে রইলেন। গগনচাঁদ হাতের মুঠোয় টচ টিপে পথে আলো ফেলতে ফেলতে চললেন।


ক্রেশ্বর দাস দুজনকে দেখে আশ্চর্য হয়ে বললেন, একি ব্যাপার? গগনচাঁদ বললেন, শোবার ঘর কোথায়? আগে আপনার স্ত্রীকে বিছানায় শুইয়ে দিই, তার পর সব বলছি। এই বুঝি অপনার চাকর? ওহে বাপ, শিগ্‌গির মালসা করে আগুন নিয়ে এস, তোমার মায়ের পায়ে সেক দিতে হবে।

 মনোলোভাকে শইয়ে গগনচাঁদ বললেন, মিস্টার দাস, আপনার স্ত্রী পড়ে গিয়েছিলেন, ডান পায়ের চেটো মচকে গেছে। চলবার শক্তি নেই, অথচ কিছুতেই আমার কথা শুনবেন না, কেবলই বলেন, লে আও পালকি, বোলাও দাস সাহেবকো। আমি জোর করে এঁকে তুলে নিয়ে এসেছি। অতি অবুঝ বদরাগী মহিলা, সমস্ত পথটা আমাকে যাচ্ছেতাই গালাগাল দিতে দিতে এসেছেন।

 মনোলোভা অস্ফুটে স্বরে বললেন, বাঃ, কই আবার দিলুম!

 বক্রেশ্বর একট, ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। এখন গরম হয়ে বললেন, তুমি লোকটা কে হে? ভদ্রনারীর ওপর জুলুম কর এতদূর আস্পর্ধা?