পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচীন কথা
৪৭

দেখালেন। সামনে একটা আঙটি রেখে তার কিছু দূরে একটা টাকা রাখলেন, তার পর মন্ত্রপাঠ করে মাথা নাড়তে লাগলেন। আঙটিটা লাফাতে লাফাতে এগিয়ে গেল এবং টাকাকে গ্রেপতার করে নিয়ে ফিরে এল। ওভারসিয়র নীরদবাবু উপস্থিত ছিলেন। তিনি ম্যাজিক জানতেন, তন্ত্রমন্ত্রে বিশ্বাস করতেন না। খপ করে সিদ্ধবাবার কান ধরে তিনি একটা সূক্ষ্ম কালো সুতো টেনে বার করলেন। সুতোটা কানে আটকানো ছিল, আঙটি আর টাকার সঙ্গেও তার যোগ ছিল।

 একদিন খবর এল, কাশী থেকে এক বাঙালিনী ভৈরবী এসেছেন, বয়স হলেও তাঁর রূপ নাকি ফেটে পড়ছে। হিন্দুস্থানীরা তাঁকে বলে মাতাজী সত্যবতী, বাঙালীরা বলে তপস্বিনী ভৈরবী। কেষ্ট জিতু আর আমি দেখতে গেলাম। মন্দিরের সামনের বারান্দায় একটা বাঘছালের উপর ভৈরবী বসে আছেন আর দু হাতের মুঠোয় একটা কলকে ধরে হুশ হুশ করে তামাক টানছেন। রঙ ফরসা, মাথায় এক রাশ কালো রুক্ষ ফাঁপানো চুল, অল্প পাক ধরেছে, কপালে ভস্মের তিলক। সামনে একটা চকচকে ত্রিশূল পড়ে আছে।

 ক্রমে ক্রমে অনেক দর্শক এল, কেউ ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করল, কেউ খাড়া হয়েই নমস্কার করল। নানা লোক ভৈরবীকে প্রার্থনা জানাল, তিনিও সকলকে আশ্বাস দিলেন। এমন সময় মুনশী রামভকত এসে করজোড়ে বললেন, মাতাজী, আজ মেরা কোঠিমে জানে কি বাত থি, এক্কা লায়া।

 ভৈরবী বললেন, হাঁ বাবা, আমার ইয়াদ আছে, একটু পরেই উঠছি। মুনশীজী, এই দেখ তোমার জন্যে আমি জয়রাম ধূপ বানিয়েছি, হপ্তা খানিক এর ধোঁয়া দিলে তোমার বাড়ির সব আলাই বালাই ভূত প্রেত দূর হবে, তোমার জরুর উপর যে চুড়ৈল (পেতনী) ভর করেছে সেও ভেগে যাবে।