পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
চমৎকুমারী ইত্যাদি

 রামভকত কৃতার্থ হয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন।

 এমন সময় ভিড় ঠেলে প্রাণকান্ত বাবু এলেন। ইনি একজন সম্ভ্রান্ত বড় অফিসার, শহরের সকলেই এঁকে খাতির করে। প্রাণকান্ত বাব, এগিয়ে এসে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করে মৃদুস্বরে বললেন, ভৈরবী মাতাজী, আমার প্রতি একটু কৃপাদৃষ্টিতে তাকান, বড়ই সংকটে পড়েছি, আপনি ছাড়া কে উদ্ধার করবে?

 ভৈরবী কৃপাদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। হঠাৎ তাঁর চোখ একটু কুঁচকে গেল, মুখে সকৌতুক হাসির রেখা ফাটে উঠল। বললেন, আরে প্রাণকান্ত যে! হরে রাম হরে রাম! চিনতে পেরেছ তো? ওকি, অমন হতভম্ব হয়ে গেলে কেন, ভূত দেখলে নাকি?

 প্রাণকান্ত বাবু, নির্বাক বিমূঢ় হয়ে মিটমিট করে চাইতে লাগলেন। ভৈরবী বললেন, সেকি প্রাণকান্ত, এর মধ্যেই ভুলে গেলে? লজ্জা কেন, এখন তুমিও সাধু আমিও সাধ্বী, দুজনেই পোড়খাওয়া খাঁটী সোনা। ওকি, পালোচ্ছ কেন, দাঁড়াও দাঁড়াও।

 প্রাণকান্ত বাবু দাঁড়ালেন না, ভিড় ঠেলে সবেগে প্রস্থান করলেন! ভৈরবী স্মিতমুখে বললেন, একটা পুরনো ভূত ভেগে গেল। চল মুনশী রামভকত, এইবার তোমার কুঠিতে যাব। ভৈরবী চলে গেলে দর্শকদের মধ্যে কলরব উঠল। এক দল বলল, ভৈরবী না আরও কিছু। ছিছি, এত লোকের সামনে কেলেঙ্কারি ফাঁস করতে মাগীর লজ্জাও হল না। সেই যে বলে, অঙ্গারঃ শতধৌতেন। আর এক দল বলল, অমন কথা মুখে আনতে নেই, উনি এখন পূর্ণমাত্রায় তপঃসিদ্ধা, গৌতমপত্নী অহল্যার মতন পাপশূন্যা, লজ্জা ভয় নিন্দা প্রশংসার বহু ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন, আগের কথাও লুকুতে চান না। সেই জন্যেই তো সত্যবতী নাম।