পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচীন কথা
৫১

নিয়ে যাব, সেখানে মরাই তো ভাল। আপনি মেথর ডাকান আর চান করে কাপড়টা ছেড়ে ফেলুন।

 অগত্যা মধু মাষ্টার ক্লাস বন্ধ করলেন।

 পরদিন কুঞ্জ স্কুলে এল না। মধু মাষ্টার বললেন, আজ বিকেলে ওর বাড়িতে খোঁজ নিস তো, কেমন আছে ছোঁড়া।

 ক্লাস প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, আমরা একসঙ্গে আবৃত্তি করছি—সকলের পিতা তুমি, তুমি সর্বময়। হঠাৎ কুঞ্জ তার মাকে নিয়ে উপস্থিত হল। মা খুব লম্বা চওড়া মহিলা, নাকে নথ, কানে মাকড়ির ঝালর, চওড়া লালপেড়ে শাড়ি কোমরে জড়িয়ে পরেছেন, মাথায় কাপড় না থাকারই মধ্যে। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নাক সিটকে একবার চারদিকে উঁকি মারলেন, যেন অরসোলা কি নেংটি ইদুর খুঁজছেন। তার পর আমাদের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলেন, মোধো মাষ্টার কোন্‌টে রে?

 একালের চাইতে তখন ছেলেদের মধ্যে শিভালরি ঢের বেশী ছিল। আমরা সকলেই সসম্ভ্রমে আঙুল বাড়িয়ে মধু মাষ্টারকে শনাক্ত করলাম।

 কুঞ্জর মা সোজা তাঁর কাছে গিয়ে কান ধরে বললেন, ইষ্টুপিট মুখপোড়া বাঁদর! তোর বেতগাছটা কোথা ৱে?

 আমরা বললাম, ওই যে, চেয়ারে ওঁর পাশেই রয়েছে। কুঞ্জর মা কিন্তু আমাদের নিরাশ করলেন। বেতটা বাঁ হাতে নিলেন বটে, কিন্তু লাগালেন না, শুধু ডান হাত দিয়ে মধু মাষ্টারের দাড়ি-ভরা গালে গোটা চারেক থাবড়া লাগালেন। তার পর বেতটা নিয়ে কুঞ্জর হাত ধরে গটগট করে চলে গেলেন।