পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
১০৩

ক্রমে পরিপূর্ণ করি’ বাহিরিতে চাহে
উদ্বেল উদ্দাম মুক্ত উদার প্রবাহে
সিঞ্চিতে তোমায়—ব্যথিত সে বাসনারে
বন্ধমুক্ত করি’ দিয়া শতলক্ষ ধারে
দেশে দেশে দিকে দিকে পাঠাব কেমনে
অস্বর ভেদিয়া। বসি’ শুধু গৃহকোণে
লুব্ধ চিত্তে করিতেছি সদা অধ্যয়ন
দেশে দেশান্তরে কা’রা করেছে ভ্রমণ
কৌতূহলবশে; আমি তাহাদের সনে
করিতেছি তোমারে বেষ্টন মনে মনে
কল্পনার জালে।—

সুদুর্গম দূরদেশ,—
পথশূন্য তরুশূন্য প্রান্তর অশেষ,
মহাপিপাসার রঙ্গভূমি; রৌদ্রালোকে
জলস্ত বালুকারাশি সূচি বিঁধে চোখে
দিগশ্ববিস্তৃত যেন ধুলিশয্যা-পরে
জরাতুরা বসুন্ধরা লুটাইছে প’ড়ে
তপ্তদেহ, উষ্ণশ্বাস বহ্নিজ্জালাময়,
শুষ্ককণ্ঠ, সঙ্গহীন, নিঃশব্দ, নির্দয়।

কতদিন গৃহপ্রান্তে বসি’ বাতায়নে
দূরদূরান্তের দৃশ্য আঁকিয়াছি মনে
চাহিয়া সম্মুখে,—চারিদিকে শৈলমালা,
মধ্যে নীল সরোবর নিস্তব্ধ নিরালা
স্ফটিক নির্মল স্বচ্ছ; খণ্ড মেঘগণ
মাতৃস্তনপানরত শিশুর মতন