পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
চয়নিকা

প’ড়ে আছে শিকড় আঁকড়ি, হিম-রেখা
নীল গিরিশ্রেণী-’পরে দূরে যায় দেখা
দৃষ্টিরোধ করি’ যেন নিশ্চল নিষেধ
উঠিয়াছে সারি সারি স্বর্গ করি’ ভেদ্
যোগমগ্ন ধুর্জটির তপোবন-দ্বারে।

মনে মনে ভ্রমিয়াছি দূর সিন্ধুপারে
মহামেরুদেশে—যেখানে লয়েছে ধরা
অনন্ত কুমারীব্রত, হিমবস্তুপরা,
নিঃসঙ্গ নিস্পৃহ, সর্ব আভরণহীন;
যেথা দীর্ঘ রাত্রি-শেষে ফিরে আসে দিন।
শব্দশূন্য সংগীতবিহীন। রাত্রি আসে,
ঘুমাবার কেহ নাই অনন্ত আকাশে
অনিমেষ জেগে থাকে নিদ্রাতন্দ্রাহত
শূন্যশয্যা মৃতপুত্র জননীর মতো।
নূতন দেশের নাম যত পাঠ করি,
বিচিত্র বর্ণনা শুনি চিত্ত অগ্রসরি’
সমস্ত স্পর্শিতে চাহে, সমুদ্রের তটে
ছোটো ছোটো নীলবর্ণ পর্বতসংকটে
একথানি গ্রাম, তীরে শুকাইছে জাল,
জলে ভাসিতেছে তরী, উড়িতেছে পাল,
জেলে ধরিতেছে মাছ, গিরিমধ্যপথে
সংকীর্ণ নদীটি চলি আসে কোনোমতে
আঁকিয়া বাঁকিয়া; ইচ্ছা করে সে নিভৃত
গিরিক্রোড়ে সুখাসীন ঊর্মিমুখরিত
লোকনীড়খানি, হৃদয়ে বেষ্টিয়া ধরি
বাহুপাশে। ইচ্ছা করে, আপনার করি