পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
১৫১

পরে মাস দেড়ে ভিটেমাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে—
করিল ডিক্রি, সকল বিক্রি, মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি।
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি’ দিল বিশ্ব নিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য,
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোহর দৃশ্য।
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি,
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারিনে সেই বিঘা দুই জমি।
হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে বছর পনেরো ষোলো,
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হোলো।৷

নমোনমো নমঃ সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি।
গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগণ-ললাট চুমে তব পদধূলি,
ছায়া-সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলা-গেহ;
স্তব্ধ অতল দিঘি-কালোজল, নিশীথ-শীতল স্নেহ।
বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ জল লয়ে যায় ঘরে,
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভ’রে।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজ-গ্রামে।
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি’ রথ-তলা করি’ বামে,
রাখি’ হাটখোলা নন্দীর গোলা, মন্দির করি’ পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে।৷

ধিক ধিক ওরে শতধিক তোরে, নিলাজ কুলটা তুমি,
যখনি যাহার, তখনি তাহার, এই কি জননী তুমি।