পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
চয়নিকা

সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্র-মাতা,
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফলফুল শাকপাতা।
আজ কোন্ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাস-বেশ,
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ।
আমি তোর লাগি’ ফিরেছি বিবাগী গৃহহারা সুখহীন,
তুই হেথা বসি’ ওরে রাক্ষসী, হাসিয়া কাটাস দিন?
ধনীর আদরে গরব না ধরে, এতই হয়েছ ভিন্ন,
কোনোথানে লেশ নাহি অবশেষ সে-দিনের কোনো চিহ্ন।
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি, ক্ষুধা-হরা সুধারাশি;
যত হাসো আজ, যত করো সাজ, ছিলে দেবী, হোলে দাসী।৷

বিদীর্ণ-হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারিদিকে চেয়ে দেখি;
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে সেই আম গাছ এ কি।
বসি’ তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালক-কালের কথা।
সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিক ঘুম,
অতি ভোরে উঠি’ তাড়াতাড়ি ছুটি’ আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন,—
ভাবিলাম হায় আর কি কোথায় ফিরে পাব সে-জীবন।
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে;
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে, বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা।
স্নেহের সে-দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা।৷

হেনকালে হায় যমদূতপ্রায় কোথা হতে এল মালী।
ঝুঁটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, “আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব!”