পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
চয়নিকা

গভীর নিশীথে, একাকী যখন
বসিয়া মলিন প্রাণে,
চমকি উঠিয়া দেখিবি তরাসে
আমিও রয়েছি বসে তোর পাশে
চেয়ে তোর মুখ পানে।
যে-দিকেই তুই ফিরাবি বয়ান,
সেই দিকে আমি ফিরাব নয়ান,
যেদিকে চাহিবি, আকাশে আমার
আঁধার মুরতি আঁকা,
সকলি পড়িবে আমার আড়ালে,
জগৎ পড়িবে ঢাকা।
দুর্ভাবনার মতন নিয়ত,
তোমারে রহিব ঘিরে,
দিবস রাত্রি এ মুখ দেখিব
তোমার অশ্রু-নীরে।
যেন রে অকূল সাগর মাঝারে
ডুবেছে জগৎ-তরী;
তারি মাঝে শুধু মোরা দুটি প্রাণী,
রয়েছি জড়ায়ে তোর বাহুখানি,
যুঝিস ছাড়াতে ছাড়িব না তবু,
মহাসমুদ্র ’পরি।
এ অন্ধকার মরুময় নিশা,
আমার পরান হারায়েছে দিশা,
অনন্ত ক্ষুধা অনন্ত তৃষা
করিতেছে হাহাকার,
আজিকে যখন পেয়েছি রে তোরে,
এ চির যামিনী ছাড়িব কী ক’রে।