পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
১৯

বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান

দিনের আলো নিবে এল সুয্যি ডোবে ডোবে।
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।
মেঘের উপর মেঘ করেছে, রঙের উপর রং।
মন্দিরেতে কাঁসর ঘণ্টা বাজল ঠং ঠং।
ও-পারেতে বিষ্টি এল, ঝাপসা গাছপালা।
এ-পারেতে মেঘের মাথায় একশ মানিক জ্বালা।
বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে ছেলেবেলার গান—
“বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান।”

আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা, কোথায় বা সীমানা।
দেশে দেশে খেলে বেড়ায় কেউ করে না মানা।
কত নতুন ফুলের বনে বিষ্টি দিয়ে যায়,
পলে পলে নতুন খেলা কোথায় ভেবে পায়।
মেঘের খেলা দেখে কত খেলা পড়ে মনে—
কত দিনের লুকোচুরি কত ঘরের কোণে।
তারি সঙ্গে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান—
“বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান।”
মনে পড়ে ঘরটি আলো মায়ের হাসি মুখ,
মনে পড়ে মেঘের ডাকে গুরুগুরু বুক।
বিছানাটির একটি পাশে ঘুমিয়ে আছে খোকা,
মায়ের ’পরে দৌরাত্মি সে না যায় লেখাজোকা।
ঘরেতে দুরন্ত ছেলে করে দাপাদাপি,
বাইরেতে মেঘ ডেকে ওঠে সৃষ্টি ওঠে কাঁপি’।