পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
২১

চির-দিন

কোথা রাত্রি কোথা দিন, কোথা ফুটে চন্দ্র সূর্য তারা,
কে-বা আসে, কে-বা যায়, কোথা বসে জীবনের মেলা,
কে বা হাসে কে-বা গায়, কোথা খেলে হৃদয়ের খেলা,
কোথা পথ কোথা গৃহ, কোথা পান্থ কোথা পথহারা।
কোথা খসে পড়ে পত্র জগতের মহাবৃক্ষ হতে,
উড়ে উড়ে ঘুরে মরে অসীমেতে না পায় কিনারা,
বহে যায় কাল-বায়ু অবিশ্রাম আকাশের পথে,
ঝর ঝর মর মর শুষ্ক পত্র শ্যাম পত্রে মিলে।
এত ভাঙা, এত গড়া আনাগোনা জীবন্ত নিখিলে,
এত গান এত তান এত কান্না এত কলরব—
কোথা কে-বা, কোথা সিন্ধু, কোথা ঊর্মি, কোথা তার বেলা;—
গভীর অসীম গর্ভে নির্বাসিত নির্বাপিত সব।
জনপূর্ণ সুবিজনে, জ্যোতির্বিদ্ধ আঁধারে বিলীন
আকাশ-মণ্ডপে শুধু বসে আছে এক “চির-দিন।”

কী লাগিয়া বসে আছ, চাহিয়া রয়েছ কার লাগি।
প্রলয়ের পর-পারে নেহারিছ কার আগমন।
কার দূর পদধ্বনি চিরদিন করিছ শ্রবণ,
চির-বিরহীর মতো চির রাত্রি রহিয়াছ জাগি।
অসীম অতৃপ্তি লয়ে মাঝে মাঝে ফেলিছ নিঃশ্বাস
আকাশ-প্রান্তরে তাই কেঁদে ওঠে প্রলয়-বাতাস,