পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৩৯

বধূ

“বেলা-যে পড়ে এল, জলকে চল্।”—
পুরানো সেই সুরে কে যেন ডাকে দূরে
কোথা সে ছায়া, সখি, কোথা সে জল,
কোথা সে বাঁধাঘাট অশ্বথ-তল।
ছিলাম আনমনে একেলা এককোণে,
কে যেন ডাকিল রে “জল্‌কে চল্।”

কলসী লয়ে কাঁখে পথ সে বাঁকা,
বামেতে মাঠ শুধু সদাই করে ধূধূ,
ডাহিনে বাঁশ-বন হেলায়ে শাখা।
দিঘির কালো জলে সাঁঝের আলো ঝলে
দুধারে ঘন বন ছায়ায় ঢাকা।
গভীর থির নীরে ভাসিয়া যাই ধীরে
কোকিল ডাকে তীরে অমিয়-মাথা।
আসিতে পথে ফিরে, আঁধার তরুশিরে
সহসা দেখি চাঁদ আকাশে আঁকা।

অশথ উঠিয়াছে প্রাচীর টুটি’,
সেখানে ছুটিতাম সকালে উঠি’।
শরতে ধরাতল শিশিরে ঝলমল,
করবী থোলো থোলো রয়েছে ফুটি।
প্রাচীর বেয়ে বেয়ে সবুজে ফেলে ছেয়ে
বেগুনি ফুলে-ভরা লতিকা দুটি!
ফাটলে দিয়ে আঁখি আড়ালে বসে থাকি,
আঁচল পদতলে পড়েছে লুটি।