পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৪৯

অন্ধকারে সূর্যালোতে সন্তরিয়া মৃত্যুস্রোতে
নৃত্যময় চিত্ত হতে মত্ত হাসি টুটে।
বিশ্বমাঝে মহান যাহা, সঙ্গী পরানের,
ঝঞ্ঝামাঝে ধায় সে প্রাণ সিন্ধুমাঝে লুটে।

নিমেষ তরে ইচ্ছা করে বিকট উল্লাসে
সকল টুটে যাইতে ছুটে জীবন উচ্ছ্বাসে।
শূন্য ব্যোম অপরিমাণ মদ্যসম করিতে পান,
মুক্ত করি রুদ্ধ প্রাণ, ঊর্ধ্বে নীলাকাশে।
থাকিতে নারি ক্ষুদ্র কোণে আম্রবন-ছায়ে,
সুপ্ত হয়ে লুপ্ত হয়ে গুপ্ত গৃহবাসে।

বেহালাখানা বাঁকিয়ে ধরি’ বাজাও ও-কী সুর।
তবলা-বাঁয়া কোলেতে টেনে বাদ্যে ভরপুর।
কাগজ নেড়ে উচ্চস্বরে পোলিটিকাল তর্ক করে,
জানালা দিয়ে পশিছে ঘরে বাতাস ঝুরুঝুর।
পানের বাটা, ফুলের মালা তবলা-বাঁয়া দুটো,
দম্ভভরা কাগজগুলো করিয়া দাও দূর।

কিসের এত অহংকার, দম্ভ নাহি সাজে।
বরং থাকো মৌন হয়ে সসংকোচ লাজে।
অত্যাচারে, মত্তপারা কভু কি হও আত্মহারা।
তপ্ত হয়ে রক্তধারা ফুটে কি দেহমাঝে।
অহর্নিশি হেলার হাসি তীব্র অপমান
মর্মতল বিদ্ধ করি’ বজ্রসম বাজে?

দাস্যসুখে হাস্যমুখ, বিনীত জোড় কর,
প্রভুর পদে সোহাগ-মদে দোছল কলেবর।