পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
চয়নিকা

সম্বরি’ বসন, ফিরে গুহাশ্রয় খুঁজি’,
বলে, “মাগো, গিরিশৃঙ্গ উড়াইল বুঝি।”
কোথায় অবস্তীপুরী; নির্বিন্ধ্যা তটিনী;
কোথা শিপ্রানদীনীরে হেরে উজ্জয়িনী
স্বমহিমচ্ছায়া; সেথা নিশি দ্বিপ্রহরে
প্রণয়-চাঞ্চল্য ভুলি’ ভবন শিখরে
শুপ্ত পারাবত; শুধু বিরহ-বিকারে
রমণী বাহির হয় প্রেম-অভিসারে
সূচিভেদ্য অন্ধকারে রাজপথ মাঝে
ক্বচিৎ-বিদুতালোকে; কোথা সে বিরাজে
ব্রহ্মাবর্তে কুরুক্ষেত্র; কোথা কনথল,
কোথা সেই জহ্ন-কন্য। যৌবন-চঞ্চল,
গৌরীর ভ্রূকুটি-ভঙ্গি করি’ অবহেলা
ফেন-পরিহাসচ্ছলে করিতেছে খেলা
লয়ে ধূর্জটির জটা চন্দ্রকরোজ্জ্বল।

এই মতো মেঘরূপে ফিরি’ দেশে দেশে
হৃদয় ভাসিয়া চলে, উত্তরিতে শেষে
কামনার মোক্ষধাম অলকার মাঝে,
বিরহিণী প্রিয়তমা যেথায় বিরাজে
সৌন্দর্যের আদি সৃষ্টি; সেথা কে পারিত
লয়ে যেতে, তুমি ছাড়া, করি’ অবারিত
লক্ষ্মীর বিলাসপুরী—অমর ভূবনে।
অনন্ত বসন্তে যেথা নিত্য পুষ্পবনে
নিত্য চন্দ্রালোকে ইন্দ্রনীল শৈলমূলে
সুবর্ণসরোজফুল্ল সরোবরকূলে
মণিহর্ম্যে অসীম-সম্পদে নিমগনা
কাঁদিতেছে একাকিনী বিরহ-বেদনা।