পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৬৯

জলরাশি অবিরল করিতেছে কলকল,
অতল রহস্য যেন চাহে বলিবারে,—
কাম্যধন আছে কোথা জানে যেন সব কথা,
সে ভাষা যে বোঝে সেই খুঁজে নিতে পাবে।
কিছুতে ভ্রূক্ষেপ নাহি, মহাগাথা গান গাহি’
সমুদ্র আপনি শুনে আপনার স্বর।
কেহ যায়, কেহ আসে কেহ কাঁদে, কেহ হাসে,
খ্যাপা তীরে খুঁজে ফিরে পরশ-পাথর।

একদিন, বহুপূর্বে, আছে ইতিহাস—
নিকষে সোনার রেখা— সবে যেন দিল দেখা—
আকাশে প্রথম সৃষ্টি পাইল প্রকাশ;
মিলি’ যত সুরাসুর কৌতুহলে ভরপুর
এসেছিল পা টিপিয়া এই সিন্ধুতীরে,
অতলের পানে চাহি’ নয়নে নিমেষ নাহি
নীরবে দাঁড়ায়ে ছিল স্থির নতশিরে;
বহুকাল স্তব্ধ থাকি শুনেছিল মুদে’ আঁখি
এই মহাসমুদ্রের গীতি চিরন্তন;
তারপর কৌতুহলে ঝাঁপায়ে অগাধ জলে
করেছিল এ অনন্ত রহস্য মন্থন।
বহুকাল দুঃখ সেবি’ নিরখিল লক্ষ্মীদেবী
উদিলা জগৎমাঝে অতুল সুন্দর।
সেই সমুদ্রের তীরে শীর্ণদেহে জীর্ণ চীরে
খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশ-পাথর।

এতদিনে বুঝি তার ঘুচে গেছে আশ।
খুঁজে খুঁজে ফিরে তবু, বিশ্রাম না জানে কভু,
আশা গেছে যায় নাই খোঁজার অভ্যাস।