পাতা:চারিত্রপুজা ২য় সংস্করণ.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগরচরিত סל এই চরিত্ররচনার প্রতিভা কোনো সাম্প্রদায়িক শাস্ত্র মানিয়া চলে না। প্রকৃত কবির কবিত্ব যেমন অলঙ্কারশাস্ত্রের অতীত, অথচ বিশ্বহৃদয়ের মধ্যে বিধিরচিত নিগুঢ়নিহিত এক অলিখিত অলঙ্কারশাস্ত্রের কোনো নিয়মের সহিত তাহার স্বভাবত কোনো বিরোধ হয় না, তেমনি যাহারা যথার্থ মনুষ্য র্তাহাদের শাস্ত্র তাহদের অস্তরের মধ্যে, অথচ বিশ্বব্যাপী মনুষ্যত্বের সমস্ত নিত্যবিধানগুলির সঙ্গে সে শাস্ত্র আপনি মিলিয়া যায় । অতএব, অন্তান্ত প্রতিভায় যেমন "ওরিজিন্তালিট” অর্থাৎ অনন্ততন্ত্রতা প্রকাশ পায়, মহুচরিত্রবিকাশেও সেইরূপ অনন্ততন্ত্রতার প্রয়োজন হয়।—অনেকে বিদ্যাসাগরের অনন্ততন্ত্র প্রতিভা ছিল না বলিয়া আভাস দিয়া থাকেন ; তাহারা জানেন, অনন্ততন্ত্রত্ব কেবল সাহিত্যে এবং শিল্পে, বিজ্ঞানে এবং দর্শনেই প্রকাশ পাইয়া থাকে। বিদ্যাসাগর এই অকৃতকীৰ্ত্তি অকিঞ্চিৎকর বঙ্গসমাজের মধ্যে নিজের চরিত্রকে মল্লযুত্বের আদর্শরূপে প্রস্ফুট করিয়া যে এক অসামান্ত অনন্ততন্ত্রত্ব প্রকাশ করিয়াছেন, তাহ বাংলার ইতিহাসে অতিশয় বিরল। এত বিরল যে, এক শতাব্দীর মধ্যে কেবল আর দুই একজনের নাম মনে পড়ে এবং তঁহাদের মধ্যে রামমোহন রায় সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ। অনন্ততন্ত্রতা শব্দটা শুনিবামাত্র তাহাকে সঙ্কীর্ণতা বলিয়া ভ্রম হইতে পারে ; মনে হইতে পারে, তাহা ব্যক্তিগত বিশেষত্ব, সাধারণের সহিত তাহার যোগ নাই। কিন্তু সে কথা যথার্থ নহে। বস্তুত আমরা নিয়মের শৃঙ্খলে, জটিল কৃত্রিমতার বন্ধনে এতই জড়িত ও আচ্ছন্ন হইয়৷ থাকি যে, আমরা সমাজের কল-চালিত পুত্তলের মতো হইয়া ষাই ; অধিকাংশ কাজই সংস্কারাধীনে অন্ধভাবে সম্পন্ন করি ; নিজত্ব কাহাকে বলে, জানি না, জানিবার আবশ্বকতা রাখি না। আমাদের ভিতরকার আসল মানুষটি জন্মাবধি মৃত্যুকাল পর্য্যস্ত প্রায় সুপ্তভাবেই কাটাইয়া দেয়,