পাতা:চারিত্রপুজা ২য় সংস্করণ.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

X 3 চারিত্রপূজা তাহার স্থানে কাজ করে একটা নিয়ম-বাধা যন্ত্র। যাহাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের পরিমাণ অধিক, চিরাগত প্রথা ও অভ্যাসের জড় আচ্ছাদনে তাহাদের সেই প্রবল শক্তিকে চাপা দিয়া রাখিতে পারে না । ইহারাই নিজের চরিত্রপুরীর মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রাপ্ত হন। অন্তরস্থ মনুষ্যত্বের এই স্বাধীনতার নামই নিজত্ব। এই নিজত্ব ব্যক্তভাবে ব্যক্তিবিশেষের, কিন্তু নিগূঢ়ভাবে সমস্ত মানবের। মহৎব্যক্তিরা এই নিজত্বপ্রভাবে একদিকে স্বতন্ত্র,—একক, অন্যদিকে সমস্ত মানবজাতির সবর্ণ,—সহোদর। আমাদের দেশে রামমোহন রায় এবং বিদ্যাসাগর উভয়ের জীবনেই ইহার পরিচয় পাওয়া যায়। একদিকে যেমন র্তাহার ভারতবর্ষীয়, তেমনি অপরদিকে যুরোপীয় প্রকৃতির সহিত র্তাহাদের চরিত্রের বিস্তর নিকটসাদৃপ্ত দেখিতে পাই। অথচ তাহ অনুকরণগত সাদৃগু নহে। বেশভূষায়, আচার-ব্যবহারে তাহারা সম্পূর্ণ বাঙালি ছিলেন : স্বজাতীর শাস্ত্রজ্ঞানে তাহাদের সমতুল্য কেহ ছিল না ; স্বজাতিকে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের মূলপত্তন তাহারাই করিয়া গিয়াছেন— অথচ নির্ভীক বলিষ্ঠত, সত্যচারিত, লোকহিতৈষী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং আত্মনির্ভরতায় তাহারা বিশেষরূপে যুরোপীয় মহাজনদের সহিত তুলনীয় ছিলেন। যুরোপীয়দের তুচ্ছ বাহ অনুকরণের প্রতি তাহারা যে অবজ্ঞাপ্রকাশ করিয়াছেন, তাহাতেও তাহদের যুরোপীয়সুলভ গভীর আত্মসন্মানবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। য়ুরোপীয় কেন, সরল সত্যপ্রিয় সাওতালেরাও যে অংশে মনুষ্যত্বে ভূষিত, সেই অংশে বিদ্যাসাগর তাহার স্বজাতীয় বাঙালির অপেক্ষা সাওতালের সহিত আপনার অস্তরের যথার্থ ঐক্য অনুভব করিতেন । মাঝে মাঝে বিধাতার নিয়মের এরূপ আশ্চৰ্য্য ব্যতিক্রম হয় কেন, বিশ্বকৰ্ম্ম যেখানে চারকোটি বাঙালি নিৰ্ম্মাণ করিতেছিলেন, সেখানে