পাতা:চারিত্রপুজা ২য় সংস্করণ.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 গরিত্রপূজা

  • আমাকে যদি এই বেশে আসিতে হয়, তবে এখানে আর আমি আসিতে পারিব না।” হালিডে তাছাকে তাহার অভ্যন্তবেশে আসিতে অনুমতি দিলেন। ব্রাহ্মণপণ্ডিত ষে চটিজুতা ও মোট ধুতিচাদর পরিয়া সৰ্ব্বত্র সন্মানলাভ করেন, বিদ্যাসাগর রাজদ্বারেও তাহা ত্যাগ করিবার আবশ্বকতা বোধ করেন নাই। র্তাহার নিজের সমাজে যখন ইহাই ভদ্রবেশ, তখন তিনি অষ্ঠ সমাজে অন্ত বেশ পরিয়া আপন সমাজের ও সেই সঙ্গে আপনার অবমাননা করিতে চাহেন নাই। শাদা ধুতি ও শাদ। চাদরকে ঈশ্বরচন্দ্র যে গৌরব অর্পণ করিয়াছিলেন, আমাদের বর্তমান রাজাদের ছদ্মবেশ পরিয়া আমরা আপনাদিগকে সে গৌরব দিতে পারি না ; বরঞ্চ এই কৃষ্ণচৰ্ম্মের উপর দ্বিগুণতর কৃষ্ণকলঙ্ক লেপন করি । আমাদের এই অবমানিত দেশে ঈশ্বরচন্দ্রের মতো এমন অখণ্ড পৌরুষের আদর্শ কেমন করিয়া জন্মগ্রহণ করিল, আমরা বলিতে পারি না। কাকের বাসায় কোকিলে ডিম পারিয়া যায়,—মানব-ইতিহাসের বিধাতা, সেইরূপ গোপনে কৌশলে বঙ্গভূমির প্রতি বিদ্যাসাগরকে মানুষ করিবার ভার দিয়াছিলেন।

সেইজন্য বিদ্যাসাগর এই বঙ্গদেশে একক ছিলেন। এখানে যেন তাহার স্বজাতি-সোদর কেহ ছিল না। এদেশে তিনি তাহার সমযোগ্য সহযোগীর অভাবে আমৃত্যুকাল নিৰ্ব্বাসন ভোগ করিয়া গিয়াছেন। তিনি মুখী ছিলেন না। তিনি নিজের মধ্যে যে এক আকৃত্রিম মনুষ্যত্ব সৰ্ব্বদাই অনুভব করিতেন, চারিদিকের জনমণ্ডলীর মধ্যে তাহার আভাস দেখিতে পান নাই। তিনি উপকার করিয়া কৃতঘ্নতা পাইয়াছেন, কাৰ্য্যকালে সহায়তা প্রাপ্ত হন নাই –তিনি প্রতিদিন দেখিয়াছেন, আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না ; আড়ম্বর করি, কাজ করি না ; যাহা অনুষ্ঠান করি, তাহা বিশ্বাস করি না ; যাহা বিশ্বাস করি, তাহ পালন করি না ; ভূরিপরিমাণ