ভারত পথিক রামমোহন রায় ዓ¢ পরিমাপের দ্বারা পরিমিত গৌরবের জোরে দেশ মাথা তুলতে পারবে না, সৰ্ব্বদেশ কালের সর্বলোকের কাছে তাকে আত্মপ্রকাশ করাতে পারবে না। তার মহত্বকে নিম্নভূমিবৰ্ত্তী জনতার আদর্শকে অনেক উপরে ছাড়িয়ে উঠতে হবে। তাতে ক’রে বর্তমানকালের সাম্প্রতিক রুচিবিশ্বাস ও · আচার তাকে নিষ্ঠুর ভাবে আঘাত করতে পারে, কিন্তু তার চেয়ে বড়ে আঘাত চিরন্তন আদর্শের আঘাত। দিঙনাগাচার্য্যের স্থলহন্তের আঘাত, সেই উপস্থিত মুহূৰ্ত্ত নিজেই সদ্য ধ্বংসোন্মুখ, কিন্তু ভারতীর স্বল্প ইঙ্গিতের আঘাত শাশ্বত কালের । সে আঘাতে যারা বিলুপ্ত হয়েছে তাদের সমসাময়িক জয়ধ্বনির তারস্বর মহাকালের মহাকাশে ক্ষীণতম স্পন্দনও রাখেনি। : ক্ষণিক অনাদরের তুফানে যাদের নাম তলিয়ে যায় রামমোহন রায় তো সেই শ্রেণীর লোক নন। বিস্মৃতি বা উপেক্ষার কুহেলিকা তার স্মৃতিকে কিছুকালের জন্ত আচ্ছন্ন রাখলেও সে আবরণ কেটে যাবেই। দেশে আজ নব জাগরণের হাওয়া যখন দিয়েছে, সরে যাচ্চে বাম্পের অন্তরাল, তখন সৰ্ব্বপ্রথমেই দেখা যাবে রামমোহনের মহোচ্চ মূৰ্ত্তি। নব যুগের উদ্বোধনের বাণী দেশের মধ্যে তিনিই তো প্রথম এনেছিলেন, সেই বাণী এই দেশেরই পুরাতন মন্ত্রের মধ্যে প্রচ্ছন্ন ছিল ; সেই মন্ত্রে তিনি বলেছিলেন, "অপাৰ্বণু', হে সত্য, তোমার আবরণ অপাবৃত করে। ভারতের এই বাণী কেবল স্বদেশের জন্তে নয়, সকল দেশের সকল কালের জন্তে । এই কারণেই ভারতবর্ষের সত্য যিনি প্রকাশ করবেন তার প্রকাশের ক্ষেত্ৰ সৰ্ব্বজনীন। রামমোহন রায় সেই সৰ্ব্বকালের মানুষ । আমরা গৰ্ব্ব করতে পারি স্থানিক ও সাময়িক ক্ষুদ্র মাপের বড়োলোককে নিয়ে, কিন্তু যাদের নিয়ে গৌরব করতে পারি তারা “পূৰ্ব্বাপরে তোয়নিৰী বগাহ স্থিত: পৃথিব্য। ইব মানদণ্ড ।” তাদের মহিমা পূৰ্ব্ব এবং পশ্চিম সমুদ্রকে স্পর্শ করে আছে।
পাতা:চারিত্রপুজা ২য় সংস্করণ.pdf/৭৯
অবয়ব