পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত ৫ ܠܹ বিদ্যাসাগরের চরিত্রে যাহা সর্বপ্রধান গুণ—যে-গুণে তিনি আচারের ক্ষুদ্রতা, বাঙালীজীবনের জড়ত্ব সবলে ভেদ করিয়া একমাত্র নিজের গতিবেগপ্রাবল্যে কঠিন প্রতিকূলতার বক্ষ বিদীর্ণ করিয়া-হিন্দুত্বের দিকে নহে, সাম্প্রদায়িকতার দিকে নহে-করুণার অশ্রুজলপূৰ্ণ উন্মুক্ত অপার মনুষ্যত্বের অভিমুখে আপনার দৃঢ়নিষ্ঠ একাগ্ৰ একক জীবনকে প্রবাহিত করিয়া লইয়া গিয়াছিলেন,আমি যদি অদ্য র্তাহার সেই গুণকীৰ্ত্তন করিতে বিরত হই, তবে আমার কৰ্ত্তব্য একেবারেই অসম্পন্ন থাকিয়া যায়। কারণ, বিদ্যাসাগরের জীবনবৃত্তান্ত আলোচনা করিয়া দেখিলে এই কথাটি বারংবার মনে উদয় হয় যে, তিনি যে বাঙালী বড়লোক ছিলেন, তাহা নহে, তিনি যে রীতিমত হিন্দু ছিলেন, তাহাও নহে-তিনি তাহা অপেক্ষাও অনেক বেশি বড় ছিলেন, তিনি যথার্থ মানুষ ছিলেন । বিদ্যাসাগরের জীবনীতে এই অনন্যসুলভ মনুষ্যত্বের প্রাচুর্য্যই সর্বোচ্চ গৌরবের বিষয়। তাহার সেই পৰ্বতপ্ৰমাণ চরিত্ৰ মাহাক্স্যে তঁহারই কৃতকীৰ্ত্তিকেও খ করিয়া রাখিয়াছে। তাহার প্রধান কীৰ্ত্তি বঙ্গভাষা। যদি এই ভাষা কখন সাহিত্যসম্পদে ঐশ্বৰ্য্যশালিনী হইয়া উঠে, যদি এই ভাষা অক্ষয় ভাবজননীরূপে মানবসভ্যতার ধাত্রীগণের ও মাতৃগণের মধ্যে গণ্য হয়, যদি এই ভাষা পৃথিবীর শোকদুঃখের মধ্যে এক নূতন সাত্মনাস্থল—সংসারের তুচ্ছতা • ১৩০২ সালের ১৩ই শ্রাবণ অপরাহুে বিদ্যাসাগরের স্মরণার্থসভার সাংবাৎসরিক অধিবেশনে এমারািন্ড থিয়েটার রঙ্গমঞ্চে পঠিত ।