পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রিপূজা سطة হওয়ায় তিনি সংসারত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছিলেন । বহুকাল পরে তর্কভূষণ দেশে ফিরিয়া আসিয়া দেখিলেন, তাহার স্ত্রী দুর্গাদেবী ভাশুর ও দেবরগণের অনাদরে প্রথমে শ্বশুরালয় হইতে বীরসিংহগ্রামে। পিত্ৰালয়ে, পরে সেখানেও ভ্রাতা ও ভ্ৰাতৃজায়ার লাঞ্ছনায় বৃদ্ধপিতার সাহায্যে পিতৃভবনের অনতিদূরে এক কুটীরে বাস করিয়া চরকা কাটিয়া, দুই পুত্র ও চারি কন্যা সহ বহুকষ্টে দিনপাত করিতেছেন। তর্কভূষণ, ভ্ৰাতাদের আচরণ শুনিয়া নিজের স্বত্ব ও তাহদের সংস্রব ত্যাগ করিয়া ভিন্ন গ্রামে দারিদ্র্য অবলম্বন করিয়া রহিলেন । কিন্তু র্যাহার স্বভাবের মধ্যে মহত্ত্ব আছে, দারিদ্র্যে র্তাহাকে দরিদ্র করিতে পারে না । বিদ্যাসাগর স্বয়ং তাহার পিতামহের যে চরিত্র বর্ণনা করিয়াছেন, স্থানে স্থানে তাহা উদ্ধৃত করিতে ইচ্ছা করি। “তিনি নিরতিশয় তেজস্বী ছিলেন ; কোন অংশে কাহারও নিকট অবনত হইয়া চলিতে, অথবা কোনোপ্রকারে অনাদর বা অবমাননা সহ । করিতে পারিতেন না । তিনি সকল স্থলে, “ সকল বিষয়ে, স্বীয় অভিপ্ৰায়ের অনুবত্তী হইয়া চলিতেন, অন্যদিীয় অভিপ্ৰায়ের অনুবর্তন, তদীয় স্বভাব ও অভ্যাসের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। উপকারপ্রত্যাশায়, অথবা অন্য কোনও কারণে, তিনি কখনও পরের উপাসনা বা আনুগত্য করিতে পারেন নাই ।”* ইহা হইতেই শ্রোতৃগণ, বুঝিতে পারিবেন, একান্নবৰ্ত্তী পরিবারে কেন এই অগ্নিখণ্ডটিকে ধরিয়া রাখিতে পারে নাই । তাহারা পাচ সহোদর ছিলেন, কিন্তু তিনি একাই নীহারিকাচক্ৰ হইতে বিচ্ছিন্ন জ্যোতিন্ধের মতো আপন বেগে বাহিরে বিক্ষিপ্ত হইয়াছিলেন। একান্নবৰ্ত্তী পরিবারে বহুভারাক্রান্ত যন্ত্রেও তঁাহার কঠিন চরিত্রস্বতন্ত্র্য পেষণ * করিয়া দিতে পারে নাই ।

  • স্বরচিত বিদ্যাসাগর চরিত, ৩১ পৃষ্ঠা।